চিত্রনায়ক সালমান শাহ হত্যা মামলার প্রতিবেদনে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ওই মামলার আসামি ও সালমানের সাবেক স্ত্রী সামিরা। খুনের দায় চাপিয়ে সালমানের পরিবার এতদিন সম্পত্তির ভাগ থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ সামিরার।
ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে গণমাধ্যমে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় চিত্রনায়িকা শাবনূর ও সালমান শাহ’র সম্পর্কের বিষয়েও কথা বলেন সামিরা। সালমান শাহ’র সঙ্গে শাবনূর প্রেম ও বিয়ে করতে চাইতেন জানার পর কষ্ট পেয়েছেন বলে জানান সামিরা। আর বিষয়টি নিয়ে সালমানের সঙ্গে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হয় তার। যার ফলে আত্মহননের পথ বেছে নেন আবেগী সালমান।
সামিরা বলেন, ‘শুরু থেকেই বলে আসছি ইমন (সালমান শাহ) আত্মহত্যা করেছে। আগে যা বলেছি সেটাই পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।’
গত সোমবার পিবিআই দুই যুগ আগের সালমান শাহ মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে জানানো হয়- সালমান খুন হননি, আত্মহত্যা করেছেন।
সামিরা আরও বলেন, ইমনের ঘটনা আমার চেয়ে আর কেউ ভালো জানবে না। আমার পরিবারের কথা আমিই তো ভালো জানবো। আমি যা জানি সেটাই বলে এসেছি এতদিন। সেটাই আবার পিবিআই তদন্ত করে জানালো।
পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে সালমান শাহের সঙ্গে শাবনূরের ঘনিষ্ঠতার কথা বলা হয়েছে। একদিন ডাবিং রুমে সালমান শাহের সঙ্গে নাকি শাবনূরকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখেছিলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে সামিরা বলেন, ‘বিষয়টি আসলে এমন না। শাবনূরের বয়স তখন অনেক কম। আমাদের বাসায় নিয়মিত আসত। ইমনকে ভাইয়া বলে ডাকত। খুব বেশি মিশত, এটা আমার ভালো লাগতো না। পৃথিবীর কোনো স্ত্রীরই এটা ভালো লাগার কথা না, আমারও লাগেনি। তবে শাবনূরের সঙ্গে সালমানের যে ঘনিষ্ঠতার কথা বলা হচ্ছে সেটা অতটা না। শাবনূর বার বার সালমানের কানের কাছে মুখ নিয়ে কথা বলছিল সে সময়। ওই দৃশ্য দেখে আমার খারাপ লেগেছিল।’
সামিরা আরও বলেন, ‘এ নিয়ে কলহের জেরে এরপর ইমন আমার কাছে ওয়াদা করে শাবনূরের সঙ্গে আর ছবি করবে না। যেগুলোতে চুক্তিবদ্ধ আছে সেগুলো শেষ করবে শুধু। তবে সেই সব ছবির শুটিং ও ডাবিংয়ে আমাকে নিয়ে যাবে। এমনিতেই ইমনের শুটিংয়ে আমার থাকা হতো। কারণ আমি ওর ড্রেস ডিজাইনার ছিলাম। এরপর শাবনূরের সঙ্গে সব ছবিতেই আমি শুটিংয়ে যেতাম। শাবনূরের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও সেখান থেকে ইমন ফিরে এসেছিলো। তার সঙ্গে আর ছবি করবে না সেটা তো সে সংবাদ সম্মেলন করে সবাইকে জানিয়েও দেয়।’
পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামিরাকে না বলে গোপনে ডাবিং করতে যায় সালমান-শাবনূর।
সামিরা এই বিষয়ে বলেন, ‘গোপনে না, ইমন তখন শাবনূরের সঙ্গে কোনো ছবির শুটিং ও ডাবিং থাকলে আমাকে সঙ্গে নিত বা জানাত। সেদিন সকালে আমাকে জানিয়েই গিয়েছিল। আমাকে যেতে বললে আমি বলেছিলাম, তুমি যাও আমি পরে আসছি।
দেখুন, দাম্পত্য জীবনে কলহ হয়, সেগুলো মিটেও যায়। শাবনূরকে নিয়ে একটা ঝামেলা ছিলো। আসলে তাকে আমি ছোট বোনের মতো দেখেছি। সে বাসায় আসতো আমাদের, শুটিং স্পটে দেখা হতো। সবসময় সালমানকে ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকতো। সে সালমানের সঙ্গে রিলেশনে যাবে এটা আমি মানতে পারিনি।
হোক সেটা একদিনের জন্য, এক মুহূর্তের জন্য। এ জগতে কোনো মেয়েই এটা মানবে না যে তার স্বামীর প্রেমিকা আছে। চারদিকে যখন শাবনূরকে নিয়ে গুঞ্জন ছড়ালো আমি বিরক্ত হয়েছিলাম। শাবনূরের ওপর মাইন্ড করেছিলাম। কিন্তু তাকে আমি একটি কথাও বলিনি। যার কর্মফল সে সে ভোগ করবে। মানুষকে ছোট করার শিক্ষা আমি পরিবার থেকে পাইনি।
এ সম্পর্ক নিয়ে কথাকাটাকাটি যা হয়েছে আমার আর সালমানের মধ্যে হয়েছে। দূরত্ব বেড়েছে, আবার মিটমাট হয়ে কাছে এসেছি আমরা। রাগ করে চলে যেতাম বাবার বাড়ি, সালমান বুঝিয়ে নিয়ে আসতো। সে কথা দিয়েছিলো শাবনূরের কাছ থেকে সরে আসবে। সংবাদ সম্মেলন করে শাবনূরকে ছোট বোন বলে ঘোষণা দিল। তার সঙ্গে ছবি না করার ঘোষণাও দিয়েছিলো। এটা ইন্ডাস্ট্রির সবাই জানে। প্রায় ২৭টি সিনেমা সে ছেড়ে দিয়েছিলো শাবনূরের বিপরীতে।’
সামিরা বলেন, ‘আত্মহত্যাকে খুন বলে চালানোর চেষ্টা করেছে ইমনের পরিবার। আর সেই দায় আমার ওপর চাপানোর চেষ্টা ছিল। কারণ, ইমনের সম্পদের ওপর যাতে আমি কোনো দাবি করতে না পারি,’ বলেন সামিরা।