ভারতে রাজধানী দিল্লিতে মুসিলিম অধ্যুষিত এলাকায় উগ্র হিন্দুদের হামলায় ৪২ জনের মৃত্যুর মধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহেরর মুখোমুখি হলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। ইস্টার্ন জোনাল কাউন্সিল বা পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠক তাদের দেখা হয়। সেখানে মমতা-অমিতের মধ্যে অন্য বিষয় নিয়ে কথা হলেও সিএএ, এনআরসি বা এনপিআর প্রসঙ্গ ওঠেনি।
পরে ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পাটনায়কের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজে অমিত শাহ’র সঙ্গে দেখা হয় মোদি সরকারের কড়া সমালোচক মমতার। মধ্যাহ্নভোজের আসরও তারা নীরবে কাটিয়েছেন বলে জানাচ্ছে ভারতীয় গণমাধ্যম।
ভারতের গণমাধ্যম জানায়, ইস্টার্ন জোনাল কাউন্সিল বা পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠক এ বার ভুবনেশ্বরে নির্ধারিত ছিল। বৈঠকে যোগ দিতে ২৫ ফেব্রুয়ারি-ই ওডিশা পৌঁছান মমতা। পরিষদের বৈঠকের আগে বা পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে আলাদা কোনো বৈঠকও হয়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
শুক্রবার বৈঠক সেরে বের হয়ে মমতা জানান, দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। দেশের রাজধানীতে যে সহিংসতা গত কয়েক দিনে দেখা গেছে, তা যাতে দেশের অন্য কোথাও প্রভাব না ফেলে, সে দিকে সকলের নজর রাখা উচিত বলে ভুবনেশ্বরে এ দিন মন্তব্য করেছেন মমতা।
অমিত শাহের সভাপতিত্বে হওয়া বৈঠকে এ দিন যারা আমন্ত্রিত ছিলেন, তাদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল চেয়ারপারসন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ সভাপতি নীতীশ কুমার এবং ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেডি সুপ্রিমো নবীন পট্টনায়কের গুরুত্ব জাতীয় রাজনীতিতেও যথেষ্টই। ওডিশার রাজনীতি ছেড়ে দিল্লির সমীকরণ নিয়ে নবীন খুব একটা মাথা ঘামাতে যান না ঠিকই, কিন্তু লোকসভা ও রাজ্যসভায় তার দলের সাংসদ সংখ্যা কম নয়। ফলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করানোর সময়ে নবীনের গুরুত্ব বেড়ে যায়। আর মমতা এবং নীতীশ নিজেদের রাজ্য সামলানোর পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতির গতিপ্রকৃতি নির্ধারণেও বরাবর সক্রিয় ভূমিকা নেন। সিএএ, এনপিআর, এনআরসি ইস্যুতে গোটা দেশের রাজনীতি যখন উত্তাল, তখন এত জন আঞ্চলিক মহারথীর সঙ্গে অমিত শাহের বৈঠক কোন পথে এগোয়, সে দিকে প্রায় গোটা দেশেরই নজর ছিল। তবে সিএএ, এনপিআর, এনআরসি নিয়ে পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠকে এ দিন কোনো কথাই হয়নি।
যে অঞ্চলের রাজ্যগুলিকে নিয়ে বৈঠক, মূলত সেই অঞ্চলের উন্নয়ন এবং বিভিন্ন আন্তঃরাজ্য ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্যই এই বৈঠকগুলি হয়ে থাকে। সুতরাং এই বৈঠকে সিএএ, এনপিআর বা এনআরসি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল না। তবে বৈঠক সেরে বেরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইঙ্গিত দেন যে, কেউ যদি ওই বিষয়গুলি তুলতেন, তা হলে তিনি নিশ্চয়ই নিজের মত আবার জানিয়ে আসতেন। সিএএ-এনআরসির প্রসঙ্গ এ দিনের বৈঠকে কেউই তোলেননি বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দিল্লির ঘটনা দুঃখজনক। সেখানে অবিলম্বে শান্তি ফিরুক। ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করতে হবে। এক পুলিশ কনস্টেবলের মৃত্যু হয়েছে। অনেক সাধারণ মানুষও মারা গিয়েছেন। সকলকে সাহায্য করতে হবে।
তবে, দিল্লির পরিস্থিতি বা রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে এই বৈঠকে আলোচনা হয়নি বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান। কয়লার উপরে সেস বসানো নিয়ে যে সমস্যা রয়েছে, আলোচনা করে তার সমাধান খুঁজে বার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। এ ছাড়া রেল, অসামরিক পরিবহণ-সহ যে সব বিষয়ের সঙ্গে সব রাজ্যেরই স্বার্থ জড়িত, সেই সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, জানিয়েছেন মমতা।
সংসদে সিএএ পাশ করানোর সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল বিলটির বিরোধিতা করেছিল। জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমারও জানিয়েছেন, তার রাজ্যে এনআরসি হতে দেবেন না। নবীনের দলও নীতীশের পথে হেঁটেই ওডিশায় এনআরসি কার্যকরী করার বিরুদ্ধেই মত দেয়। আর মমতার দল তো বার বারই বলেছে সিএএ, এনআরসি, এনপিআর— কোনওটাই কার্যকরী করা হবে না বাংলায়।
এ দিনের বৈঠকের ফাঁকেই মধ্যাহ্নভোজ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। মধ্যাহ্নভোজের বিরতি না নিয়ে একটানা বৈঠক চলে। তাই বৈঠক শেষে ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের বাড়িতেই মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা হয়। নবীনের সেই মধ্যাহ্নভোজে অমিত শাহ, নীতীশ কুমার এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো ছিলেনই, ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা ওডিশার গুরুত্বপূর্ণ বিজেপি নেতা ধর্মেন্দ্র প্রধানও।