ফরিদপুরের সদরপুরে আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙন রোধে শুরু হয়েছে তীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিংয়ের কাজ। এই কাজ সম্পন্ন হলে এই নদীতে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে। এতে কয়েক হাজার একর ফসলি জমি রক্ষার পাশাপাশি রক্ষা পাবে বসতবাড়ি-সড়ক।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, ২০১৮-১৯ অর্থ বছর থেকে আড়িয়াল খাঁ নদের তীর সংরক্ষণের এই কাজ শুরু হয়। ২৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে দশটি গ্রুপে বিভক্ত এ কাজের মধ্যে ৫ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ ও ৬ দশমিক ৩ কিলোমিটার নদীর ড্রেজিং কাজ করা হবে। ২০২১ সালের জুনে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে।
ওই এলাকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা চরাঞ্চলের ৫৮ বছর বয়সী কৃষক হবি খাঁ বলেন, জন্মের পর থেকে আমরা আড়িয়াল খাঁর ভাঙনের শিকার। চারবারের ভাঙনের পর বর্তমান স্থানে বসত গড়েছি। এখন নদীর তীর বাঁধাইয়ের কাজটি ভালোভাবে শেষ হলে তারা পরিবার নিয়ে নিরাপদে বসবাস করতে পারবেন।
৬০ বছর বয়সী আরেক কৃষক নুরুল আলম জানালেন, ৫০ বছর যাবত এই আড়িয়াল খাঁ নদে ভাঙন দেখেছি। এখন এই কাজ শুরু হওয়ায় নতুন করে বসত গড়ার স্বপ্ন দেখছি আবার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আড়িয়াল খাঁ নদের বলাশিয়ায় স্থান থেকে কাজের শুরু হয়েছে। সেখানে নদীর তীরে ড্রেজিংয়ের কাজ চলছে। পাশাপাশি চলছে ব্লক তৈরির কাজ। ড্রেজিং শেষে নদীর তীরে এসব ব্লক প্রতিস্থাপন করে পাড় বাঁধাই করে দেয়া হবে।
ওই কাজের ১ নম্বর প্যাকেজের নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নূর এন্টার প্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী ইকবাল হোসেন বলেন, গত বছরের নভেম্বরে কার্যাদেশ পেয়ে ড্রেজিং ও ব্লক তৈরির কাজ শুরু করি। এ পর্যন্ত ৬০ ভাগ ড্রেজিং সম্পন্ন হয়েছে। ব্লক তৈরি হয়ে গেছে প্রায় ৯০ ভাগ।
ফরিদপুর-৪ আসনের সাংসদ মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর সদরপুর ও চরভদ্রাসনে পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেয়া ছিল তার প্রধান অঙ্গীকার। তৎকালীন পানিসম্পদ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে নিয়ে সরেজমিনে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিগোচর করা হলে জনগুরুত্বপূর্ণ বৃহৎ এই প্রকল্পের অনুমোদন পায়। প্রকল্প কাজ বাস্তবায়ন হলে এই এলাকার মানুষের জানমালের নিরাপত্তার পাশাপাশি আর্থিক স্বচ্ছলতাও ফিরে আসবে বলে তিনি জানান।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, জেলার তিনটি বড় নদীর মধ্যে আড়িয়াল খাঁ একটি। স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘদিন এই এলাকার মানুষ আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙনের শিকার হচ্ছেন। প্রতি বছরেই বর্ষা মৌসুমে আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙনে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ও ফসলি জমির ক্ষতি হতো। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এসব ক্ষতি রোধ করা সম্ভব হবে। কাজের মান যাতে ভাল হয়, সেজন্য নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট মেয়াদেই কাজটি সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।