আজকের দিন নিয়ে আর মাত্র একটি দিন। তারপরই শেষ হবে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০। তাই মেলায় এখন ভাঙনের সুর। তবে শেষের এই সময়টাতে মেলা পুরোপুরি জমে ওঠেছে। চলছে বই বিক্রির হিড়িক। পছন্দের লেখকের বইটি কিনে নিতে এখন আর কেউ পিছপা হচ্ছেন না। বাজেট অনুযায়ী সবাই বই কিনছেন।
আজ মেলার শেষ শুক্রবার। সকাল থেকেই মেলা জমে উঠবে। বিকালে পরিণত হবে জনসমুদ্রে। বৃহস্পতিবার বইমেলা ঘুরে দেখা যায়, হাতে হাতে শুধু বই। প্রচুর লোক সমাগম হয় এদিন। বইয়ের বিক্রিও ছিল বেশ। এই বিক্রি হাসি ফুটিয়েছে প্রকাশকদের ঠোঁটে। আজ প্রকাশকরা আরও ভালো বিক্রির প্রত্যাশা করছেন।
গ্রন্থমেলায় হুমায়ুন আজাদকে স্মরণ
বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদের ওপর মৌলবাদী চক্রের সন্ত্রাসী হামলার বার্ষিকীতে একুশে গ্রন্থমেলায় আজ বিকালে তাকে স্মরণ করা হয়। লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের যৌথ উদ্যোগে বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের তথ্যকেন্দ্রের সামনে আয়োজিত এ সভার শুরুতে তার স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। কবি কাজী রোজী, শিল্পী ফকির আলমগীর, শিশুসাহিত্যিক লুৎফর রহমান রিটন, প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম, গবেষক আসাদুজ্জামান আসাদ, কবি পিয়াস মজিদ, কবি জাহিদুল হাসান এবং হুমায়ুন আজাদের অনুজ সাজ্জাদ কাদির ও হুমায়ূন আজাদের কন্যা মৌলি আজাদ বক্তব্য দেন।
সভাপতিত্ব করেন প্রকাশক ওসমান গনি। বক্তারা বলেন, হুমায়ুন আজাদের হত্যাচেষ্টার বিচার অবিলম্বে বাস্তবায়ন এবং তার আদর্শে মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমাজ-রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমেই তাকে যথাযোগ্যভাবে স্মরণ করা হবে।
মেলায় তথ্যমন্ত্রী
ইমরান আকন্দের ‘বিপ্লবী নূর হোসেন’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করতে বৃহস্পতিবার বইমেলায় এসেছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বাংলা একাডেমির পুকুর পাড়ে মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে এ উন্মোচন পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তিনি আরও দুটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন। বইগুলো হল শিবুকান্তি দাসের ‘আমার বঙ্গবন্ধু আমার স্বাধীনতা’ এবং মোহাম্মদ হোসেনের ‘মৃত্তিকা থেকে আকাশ ছুঁয়েছে যে নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’।
এ সময় বইগুলোর মোড়ক উন্মোচন করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, জীবন গড়ার জন্য এবং প্রত্যয়ী মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে বইয়ের বিকল্প নেই। অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সন্তানদের হাতে স্মার্টফোন না দিয়ে বই তুলে দিন। আমার রাজনীতিতে আসার পেছনেও বেশ কয়েকটি বইয়ের গুরুত্ব রয়েছে।
মূলমঞ্চের আয়োজন
বিকালে অনুষ্ঠিত হয় শামসুজ্জামান খান সম্পাদিত ‘বঙ্গবন্ধু নানা বর্ণে নানা রেখায়’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আহমাদ মাযহার। আলোচনায় অংশ নেন সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, এনামুল করিম নির্ঝর এবং আমীরুল ইসলাম। বক্তব্য দেন গ্রন্থের সম্পাদক শামসুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করেন মাহফুজা খানম।
আলোচকরা বলেন, বঙ্গবন্ধু নানা বর্ণে নানা রেখায় গ্রন্থটি অত্যন্ত সুশোভিত, সুগ্রন্থিত এবং সুসম্পাদিত। গ্রন্থটির অবয়ব ও সংকলিত লেখাগুলো থেকে একে কিশোর পাঠকদের জন্য রচিত মনে হওয়াই স্বাভাবিক। গ্রন্থের প্রতিটি লেখাই তাৎপর্যপূর্ণ কেননা দেশের বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক ও গবেষকরা তাদের লেখায় বঙ্গবন্ধুকে নানা মাত্রায় এখানে উপস্থাপন করেছেন। স্কুল, কলেজ, গ্রন্থাগার এবং সরকারি-বেসরকারি শিশু সংগঠনগুলোর মাধ্যমে গ্রন্থটি শিশু-কিশোর তথা পাঠকদের হাতে পৌঁছে দিতে পারলে বাঙালির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তাদের জানার পরিধি বৃদ্ধি পাবে।
গ্রন্থের সম্পাদক বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটেছে বঙ্গবন্ধু নানা বর্ণে নানা রেখায় বইয়ে।
কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি রবীন্দ্র গোপ, বদরুল হায়দার, তপন বাগচী এবং খালেদ উদ্-দীন। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী সামিউল ইসলাম পোলক এবং সংগীতা চৌধুরী। পুঁথিপাঠ করেন জালাল খান ইউসুফী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল মিলন কান্তি দে’র রচনা ও নির্দেশনায় এবং দেশ অপেরা’র পরিচালনায় যাত্রাপালা ‘রক্তে রাঙানো বর্ণমালা’।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন রফিকুর রশীদ, সালমা বাণী, মতিন্দ মানখিন এবং নওশাদ জামিল।
নতুন বই
বৃহস্পতিবার বইমেলায় নতুন বই এসেছে ১৫৫টি। মেলার ২৬তম দিন সব মিলিয়ে নতুন বই এসেছে ৪ হাজার ৩৯৪টি। এর মধ্যে কবিতার বই এসেছে ১ হাজার ৩৯৯টি, উপন্যাস ৬৭৬, গল্প ৫৬৩, প্রবন্ধ ২৪৬, ছড়া ১০৪, শিশুতোষ ১৮৪, জীবনী ১৩১, মুক্তিযুদ্ধ ১৪১, বঙ্গবন্ধু ১২৬, অনুবাদ ৫১।