মিয়ানমারের সংঘাতে বিধ্বস্ত পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন প্রদেশে দেশটির সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষে এক শিশু-সহ অন্তত ৫ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এই সংঘর্ষে আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে রোববার স্থানীয় এক সংসদ সদস্য এবং দুই বাসিন্দা ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।
রাখাইনের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) মুখপাত্র খিন থু খা এবং আঞ্চলিক এমপি তুন থার সেইন বলেন, শনিবার রাখাইনের এমরাউক ইউ শহরের ঐতিহাসিক একটি মন্দির অতিক্রম করার সময় সেনাবাহিনীর গাড়িবহরে হামলা চালায় বিদ্রোহীরা। এই হামলার পর সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ শুরু হয়।
হামলা-সংঘর্ষের ব্যাপারে মন্তব্য জানতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অন্তত দুই মুখপাত্রের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করলেও সাড়া পায়নি রয়টার্স। এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর ওয়েবসাইটেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনও বিবৃতি দেয়া হয়নি।
সংঘর্ষে বেসামরিক হতাহতের ঘটনায় দেশটির সরকারি বাহিনীকে দায়ী করেছেন আরাকান আর্মির মুখপাত্র খিন থু খা। তবে দেশটির সরকারি এক মুখপাত্র বলেছেন, তিনি মন্তব্য করতে পারবেন না।
এদিকে, রাখাইনের প্রত্যন্ত ওই এলাকায় হামলার বিস্তারিত তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স। সহিংসতায় বিধ্বস্ত এই অঞ্চলে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ির আছে। এছাড়া ইন্টারনেট সংযোগও সচল নেই রাখাইনে।
আরাকান আর্মির ওই মুখপাত্র বলেছেন, রাখাইনের বু তা লোন গ্রামে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর গোলা আঘাত হেনেছে। এতে অন্তত চারজনের প্রাণহানি ঘটেছে। এমপি তুন থার সেইন, স্থানীয় একজন স্বাস্থ্যকর্মী ও একজন গ্রামবাসী বলেছেন, নিপীড়িত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের কমপক্ষে পাঁচ সদস্য নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১২ বছরের এক শিশুও রয়েছে।
তবে সেনাবাহিনী গোলায় আহতের সংখ্যা নিয়ে বিপরীতমুখী তথ্য পাওয়া গেছে। অনেকেই ছয়জন আহত হয়েছেন বলে জানালেও কেউ বলছেন, এই সংখ্যা ১১।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রক্তাক্ত অভিযানে ৭ লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছে। জাতিসংঘের তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলেছেন, গণহত্যার উদ্দেশ্যে এই অভিযান পরিচালনা করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সেই সময়রোহিঙ্গা নারী, শিশু, তরুণীদের ধর্ষণ, গণধর্ষণ, হত্যার পাশাপাশি তাদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। তবে মিয়ানমার গণহত্যার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এমপি তুন থার সেইন বলেন, শনিবার গাড়িবহর আক্রান্ত হওয়ার পর অন্তত দুটি গ্রামে গোলাবর্ষণ করেছে সেনাবাহিনী। হামলার জবাবে সেনাবাহিনী সন্দেহজনক অবস্থানে গোলাবর্ষণ করেছে। নাম প্রকাশে রাখাইনের এক রোহিঙ্গা বলেছেন, পাঁচ রোহিঙ্গা মুসলিমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার তাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের মরদেহে গুলির ক্ষত ছিল।
এর আগে, গত জানুয়ারিতে রাখাইনে বিস্ফোরণে চার রোহিঙ্গা শিশুর প্রাণহানি ঘটে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং বিদ্রোহীগোষ্ঠী আরাকান আর্মি এই বিস্ফোরণের জন্য পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করে।
এর সপ্তাহ খানেক পরে বুথিডং শহরের একটি গ্রামে সেনাবাহিনীর ছোড়া গোলার আঘাতে দুই নারীর প্রাণ যায়।রাষ্ট্রবিহীন নিপীড়িত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের সুরক্ষায় জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত মিয়ানমারকে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়ার মাত্র দুদিন পর এই ওই দুই নারী মারা যান।
- দিল্লির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা: স্পিকারের ভারত সফর স্থগিত
- আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে : মাহাথির
সেই সময়ও মিয়ানমার সেনাবাহিনী গোলায় দুই নারীর প্রাণহানির জন্য আরাকান আর্মিকে দায়ী করে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর পদ্ধতিগত নিধনের অভিযোগ এনে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া।