চলতি বছর বহুল প্রতীক্ষিত তিস্তা চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে সন্দেহ থেকে গেলেও ফেনী নদীর পানির প্রতিদান হিসেবে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টনের চুক্তি সই হতে পারে। আর সেটার সম্ভাবনা রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন ঢাকা সফরেই।
সোমবার (২ মার্চ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা সাক্ষাতে এসে এমন বার্তা দিয়েছেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন।
মোমেন বলেন, তিস্তা নয় অন্য ৬ নদীর যেকোনোটি দিয়ে ভারত ফেনী নদীর পানির প্রতিদান দিতে চায়। মোদির সফরের সময় এসব তথ্য আদান-প্রদানের সম্ভাবনা আছে। এবার ৬ টি নদীর বা এক বা একাধিক নদীর পানি বণ্টনের তথ্য আদান-প্রদান হতে পারে।
গত বছরের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়া দিল্লি সফরে ফেনী থেকে ত্রিপুরার সাবরুম এলাকার সুপেয় পানি প্রকল্পের জন্য ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি দেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়। সেই সফরে দুই দেশ নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছিল পানি বণ্টনের বিষয়ে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরে তারই ধারাবাহিকতায় অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টনের চুক্তি সই হতে পারে।
সৌজন্য সাক্ষাতে শ্রিংলা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি কবে নাগাদ হবে এ বিষয়ে পরিষ্কার কোনো জবাব দেননি বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে এর আগে ঢাকার একটি হোটেলে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব চলতি বছরের মধ্যে তিস্তা হওয়ার সম্ভবনার কথা জানান। এ নিয়ে তথ্য হালনাগাদের কথা জানান তিনি।
শ্রিংলাকে সীমান্ত হত্যা নিয়েও অবহিত করেন মোমেন। তিনি বলেন, আমি বলেছি, আমরাতো চুক্তি করেছিলাম সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনব। কিন্তু এ বছর শুরুতেই অনেকগুলো হত্যাক্যাণ্ড হয়েছে। তিনি আমাকে আশস্ত করেছেন, তারা এ বিষয়ে কাজ করবেন। যেন এমনটা না হয়।
চলতি বছরের শুরুর মাসে সীমান্তে পরপর বেশ কয়েকটি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ এ নিয়ে উদ্বেগও জানিয়েছে। আলোচনা করেছে ঢাকায় নিযুক্ত হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাসের সঙ্গেও।
সাক্ষাতে আরও উঠে আসে ভারতের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ)’র মতো বিষয়ও।
এ বিষয়ে মোমেন বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, আপনারা এ বিষয়ে কোনো চিন্তাই করবেন না। এটা নিয়ে আপনাদের কিছু হবে না।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব আশস্ত করার পরও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রিংলাকে অবহিত করেন বাংলাদেশের মানুষ এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন। আর এটা নিয়ে দেশের মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে হয় বলেও সচিবকে জানান মন্ত্রী।
২০২০ সালের ১৭ মার্চ শুরু হয়ে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হবে। বঙ্গবন্ধুর এই জন্মশত বার্ষিকীতে মূল অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ও বিশ্বনেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রিত বিশ্ব নেতাদের মধ্যে প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রয়েছেন তালিকার প্রথমদিকে। আর তার সফর চূড়ান্ত করতেই ঢাকায় এসেছেন সচিব। তবে এরই মধ্যে ভারতের দিল্লির দাঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন মহল নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশে আসার বিষয়ে আপত্তি তুলেছে। তারা এ নিয়ে হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছে।
এমন অবস্থায় মোদির সফর নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা অতিথিকে দাওয়াত দিয়েছি এবং আমরা তার সম্মান রাখবো। পাশাপাশি আমরা আশা করবো আমাদের অতিথিরা এদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগের বিষয়ে সজাগ থাকবেন। এমন আচরণ করবেন, যাতে করে আমাদের জনগণ খুশি হয়।