২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে এক হাজার ১৫১ কোটি ডলার এমন তথ্য প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই)। তবে অর্থ পাচার-সংক্রান্ত এ প্রতিবেদন সম্পর্কে সরকার কিছু জানে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সরকারি-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থ পাচার-সংক্রান্ত জিএফআইয়ের এ প্রতিবেদন সম্পর্কে সরকার কিছু জানে না। যারা এ অপরাধে জড়িত (অর্থ পাচারের সঙ্গে) তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, জিএফআইয়ের অর্থ পাচার-সংক্রান্ত তথ্য আমার কাছে নেই। এ বিষয়টি আমার নলেজে নেই। তাদের (জিএফআই) কাজই হলো এ সব তথ্য বের করা, তথ্য বিশ্লেষণ করা। ওদের (জিএফআই) যদি কোনো বক্তব্য থাকে তাহলে তো আমাকে জানাবে! পত্রিকায় এই সব তথ্য দিয়ে কী লাভ?
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা জিএফআইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সাত বছরে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ হাজার ২৭০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যা সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা, যা দেশের চলতি বছরের (২০১৯-২০২০) জাতীয় বাজেটের প্রায় সমান। প্রতি বছর গড়ে পাচার হয়েছে প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা।
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, তারা (জিএফআই) আমাকে দেখতে পারে না। সরকারকে দেখতে পারে না। আইডিয়া থেকে অনেক কিছু বলা যায়। তারা আইডিয়ার ওপর এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে।
অর্থ পাচার-সংক্রান্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, যেহেতু এই বিষয়ে জানি না, এই বিষয়ে কথা বলব না। বিষয়টা আমরা দেখব ও বিশ্লেষণ করব। পরে আপনাদের জানাব। বর্তমানে আমার নলেজে নেই। এই তথ্য আমার কাছেও নেই।
তিনি বলেন, আইডিয়া দিয়ে অনেক কিছু করা যায়। যেহেতু বিষয়টা জানি না এই বিষয়ে কিছু বলব না। তারা এই তথ্য কোথায় পেয়েছে? আমি বলে দিলাম বছরে আমেরিকা থেকে ৩০ হাজার লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে যায়। তাহলেই কী হয়ে গেল?
সরকারের করণীয় কী জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার তো এই বিষয়ে জানেই না। সরকারকে তো আগে জানতে হবে। বাংলাদেশে তথ্য আসেনি। তথ্য আসলে তো আমি জানতাম। আমি সরকারের একটা অংশ। সরকারের কাছে তথ্য এলে আমি পেতাম। যদি এখান থেকে টাকা চলে যায় তাহলে তো অর্থমন্ত্রণালয়ের টাকাই যাবে।
টাকা পাচারে কোনো পদক্ষেপ নেবেন কী না এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, এই বিষয়ে মামলা ছাড়া আর কী করতে পারি? কারো কিছু অপরাধ আসলে মামলা করি। মামলা করলে দুদক থেকে শুরু করে সরকারের অন্যান্য তদন্ত সংস্থা ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। কাউকে জেলে পাঠায়, কেউ আবার মুক্তি পায়।
ব্যবসায়ীরা কানাডায় বাড়ি করছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আপনারা অর্থমন্ত্রী হলে কি করতেন? আমরাও পদক্ষেপ নিচ্ছি, অনেকে জেলে আছে। তবে সর্বশেষ বিষয়টা কোর্ট দেখেন।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে এক হাজার ১৫১ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। পাচারের এ পরিমাণ ২০১৪ সালের চেয়ে বেড়েছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে চারটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। জিএফআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই প্রক্রিয়ায় এই অর্থ পাচার হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে মূল্য বেশি দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং) এবং রফতানিতে মূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনভয়েসিং)।
জিএফআইয়ের তথ্যমতে, গত সাত বছরে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ হাজার ২৭০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যা সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা। যা দেশের চলতি বছরের (২০১৯-২০২০) জাতীয় বাজেটের প্রায় সমান। প্রতি বছর গড়ে পাচার হয়েছে প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা। টাকা পাচারে বিশ্বের শীর্ষ ৩০ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম।