পাপিয়াকাণ্ডে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের অনেকের নাম আসা নিয়ে আওয়ামী লীগ বিব্রত নয় বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ব্যক্তির কর্মকাণ্ডে দল বিব্রত নয়। দলের লোকের জন্য আমরা আমাদের অবস্থান থেকে বিচ্যুত হই না। অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস আমাদের আছে। ব্যবস্থা নিয়েছি, অনেকে শাস্তি পেয়েছে, অনেকে শাস্তি পাওয়ার অপেক্ষায় আছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থানে আছেন। আমরা অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে দেখছি, দলীয় লোক হিসেবে দেখি না।
নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক পাপিয়া, তার স্বামী নরসিংদীর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন এবং তাদের দুই সহযোগীকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
সে সময় বলা হয়, গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে বিলাসবহুল কক্ষ ভাড়া করে সমাজের উঁচুতলার লোকদের জন্য ‘যৌনসেবার কারবার’ চালিয়ে আসছিলেন পাপিয়া। পরে জাল মুদ্রা, অস্ত্র ও মদ উদ্ধারের ঘটনায় তিনটি মামলা হয় পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে। প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করে পাপিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিলেও একদিন বাদে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি)।
যুব মহিলা লীগের মতো একটি সংগঠনের একটি জেলার সাধারণ সম্পাদক হয়ে ওয়েস্টিনের মতো পাঁচতারা হোটেলের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রেসিডেনশিয়াল স্যুইট মাসের পর মাস ভাড়া রেখে পাপিয়ার নানা অপকর্মে প্রভাবশালীদের মদদ থাকার বিষয়টি তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছেও স্পষ্ট। রিমান্ডে পাপিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বরাতে বিভিন্ন তথ্য আসছে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
এরই মধ্যে এতে জড়িত হিসেবে কয়েকজন সচিব, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের কর্মকর্তা, সংসদ সদস্য, টকশোর আলোচক, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীর নাম সোশাল মিডিয়ায় এসেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পাপিয়ার সঙ্গে জড়িত হিসেবে বিভিন্নভাবে যাদের নাম আসছে, তাদের মোবাইল ফোনের কল লিস্ট সংগ্রহের কাজ চলছে।
পাপিয়ার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইল ফোনে বহু ভিডিও পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা, যেগুলো পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
পাপিয়াকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সরকারের অনেকের নাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, এতে বিব্রত কিনা বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে।
পিরোজপুরের আদালতের ঘটনা প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, এটা আইন বিভাগ ও আইন মন্ত্রণালয়ের বিষয়। এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী কথা বলেছেন। আইন মন্ত্রণালয় ও বিচার বিভাগের বিষয় নিয়ে আমার কথা বলা সমীচীন হবে না।
তিনি বলেন, আমরা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনে বিশ্বাস করি। এটাই আমাদের অবস্থান। তবে এই ঘটনার সঙ্গে যদি দলীয় কোনো বিষয় থেকে থাকে তাহলে সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি।
মুজিববর্ষ উদযাপনকে কেন্দ্র করে বিএনপি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায় বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
সেতুমন্ত্রী বলেন, মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান নিয়ে সরকার কোনো প্রতিবন্ধকতা দেখছে না। সব প্রস্তুতি যথাযথভাবে এগিয়ে চলছে। কিছু লোক আছে বিশেষ করে বিএনপি তারা সব কিছুতেই বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করে। বিএনপি শুধু ইস্যু খোঁজে। তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড। তারা বঙ্গবন্ধুর প্রাসঙ্গিকতা ও ঔজ্জল্য ঢেকে দিতে পারেনি। তাই এখন মুজিববর্ষ উদযাপনের বিরোধিতা করছে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গির কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল উপস্থিত ছিলেন।
পরে মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।