বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী নিয়ে অনেকটা নির্ভার আওয়ামী লীগ। তবে প্রায় সবগুলো ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহীদের নিয়ে দুশ্চিন্তা কমেনি ক্ষমতাসীন দলের।
অন্যদিকে মেয়র পদে বিএনপির হয়ে লড়ছেন ডা. শাহাদাত হোসেন। কাউন্সিলর পদে ২০৫ জন মনোনয়ন ফরম নিলেও কোনো ধরনের কোন্দল আর বিতর্ক ছাড়াই ৪১ জন কাউন্সিলর ও ১৪ জন মহিলা কাউন্সিল প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। ফলে তারা অনেকটা স্বস্তি নিয়েই নির্বাচনী মাঠে থাকছেন।
জানা গেছে, এক ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ ১০ জনও বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। দলের আহ্বান-অনুরোধও তারা আমলে নেননি। তাই এবার বিদ্রোহীদের বাগে আনতে হার্ডলাইনে দলটির নীতিনির্ধারকরা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিদ্রোহীদের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। অন্যথায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনসহ নেতারা বলেন, যারা আওয়ামী লীগ করেন তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন। না হলে দলীয়প্রধানের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
- আরও পড়ুন >> মোদির বাংলাদেশ সফর নিশ্চিত করল ভারত
এদিকে বিদ্রোহী নিয়ে আওয়ামী লীগ যখন ঝামেলায় তখন কোন্দল ছাড়াই মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী দিতে পেরে স্বস্তিতে আছে বিএনপি। তবে তাদেরও ২৫জন বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। যদিও প্রার্থী ও নেতারা বলছেন, সুষ্ঠু ভোট হলে এবং ভোটাররা ভোট দিতে পারলে তাদের প্রার্থীরা জয়ী হবেন। নির্ধারিত সময়ের আগে যারা বিদ্রোহী আছেন তারাও সরে দাঁড়াবেন। দলের প্রার্থীদের পক্ষেই কাজ করবেন।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চট্টগ্রামের নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ঢাকা বলেন, আমরা সব প্রার্থীদের নিয়ে বসেছিলাম। সবাইকে বলে দিয়েছি কেন্দ্র থেকে যাদের সমর্থন দেয়া হয়েছে তারাই আমাদের প্রার্থী। সবাইকে তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। বিদ্রোহী যারা আছেন তারা যেন দলের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে বসে যান সে কথা বলেছি। আশা করি নেত্রী যাদের প্রার্থী করেছেন তাদের সমর্থনে সরে দাঁড়াবেন।
জানা গেছে, নির্বাচনে ৫৫টি সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মধ্যে ৫১টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আছে। নগরীর একটি ওয়ার্ডে (চান্দগাঁও) সর্বোচ্চ ১০ জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে আওয়ামী লীগের। ৫১টি ওয়ার্ডে প্রায় ১২৫ জন বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনের মাঠ না ছাড়ায় এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময় ৮ মার্চ। তাই এর আগেই যাতে বিদ্রোহীদের বাগে আনা যায় সেজন্য সবাইকে নিয়ে বৃহস্পতিবার বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে রুদ্ধদ্বার এক বৈঠক শেষে চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, যারা আওয়ামী লীগ করেন তারা নির্বাচন থেকে সরে দাড়াঁবেন। না হলে দলীয় প্রধানের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্বস্তিতে বিএনপি
এদিকে মেয়র পদে দলের পার্লামেন্টারি বোর্ডের সবাই বিএনপি থেকে ডা. শাহাদাত হোসেনকে সমর্থন করেন। মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার পরই সব ধরনের কোন্দল মিটিয়ে এক সাথে কাজ করার ঘোষণা দেন তিনি।
অন্যদিকে কাউন্সিলর পদে বিএনপির ২০৫ জন মনোনয়ন ফরম নেন বলে জানা গেছে। কোনো ধরনের কোন্দল আর বিতর্ক ছাড়াই ৪১ জন কাউন্সিলর ও ১৪ জন মহিলা কাউন্সিলের নাম ঘোষণা করে মনোনয়ন বোর্ড।
২০১০ সালে বিএনপি প্রার্থী এম মঞ্জুর আলম আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। কিন্তু ২০১৫ সালের সিটি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী এম মঞ্জুর আলম পরাজিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ জ ম নাছিরের কাছে। তাই এবার হারানো বিজয় ফিরিয়ে আনতে একজোট হয়ে মাঠে নামার কথা বলছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, যত বাধাই আসুক শেষ পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবেন।
বৃহস্পতিবার নগরীতে বিএনপির বর্ধিত সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, যত বাধা আসুক, কোনো কিছুতেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবো না আমরা। আর যতই চাপ দেন লাভ নেই, মাঠ ছাড়বো না। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে আমরা আছি, থাকবো। যত ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন, মনোবল তত শক্ত হচ্ছে।
আর বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনও একই সূরে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, যত বাধা আসুক আমরা নির্বাচনের মাঠে থাকবো। প্রয়োজনে রক্ত দেবো, তারপরও নির্বাচনের মাঠ ছাড়বো না। সকল অন্যায় প্রতিহত করে জয় ছিনিয়ে আনবো।