বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য মুক্তি চেয়ে স্বরাষ্ট্র এবং আইনমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেয়ার পর তার পরিবার এখন জবাবের অপেক্ষায় রয়েছে। খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম বিবিসিকে বলেছেন, তারা তাদের চিঠিতে প্যারোলের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু লেখেননি।
একইসাথে তিনি উল্লেখ করেছেন, এখন তার বোনের জীবন বাঁচাতে চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেয়া হলেও তাদের পরিবারের সদস্যদের কোনো আপত্তি থাকবে না।
তবে পরিবারের অন্য একটি সূত্র এবং সরকারি সূত্রে জানা গেছে, পরিবারের চিঠিতে মানবিক কারণে সরকারের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাওয়া হয়েছে।
সেলিমা ইসলাম দাবি করেছেন, হাসপাতালে বেগম জিয়ার সাথে সম্প্রতি দেখা করে তার অনুমতি নিয়েই তারা মুক্তি চেয়ে এবার স্বরাষ্ট্র এবং আইনমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছেন।
খালেদা জিয়ার ভাইবোনদের পক্ষ থেকে তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্র এবং আইনমন্ত্রীর কাছে লেখা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।
যা লেখা হয়েছে চিঠিতে
সেলিমা ইসলাম জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবরে এই চিঠিতে আমরা লিখেছি যে, বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা পরিবারের সদস্যরা তাকে বিদেশে নিয়ে যেতে চাইছি। সেজন্য তার মুক্তি প্রয়োজন। তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার জন্য মানবিক কারণে মুক্তির বিষয়টি বিবেচনা করা হোক।
তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা প্রতিনিয়ত খারাপ হচ্ছে। সে বিষয়টি তারা চিঠিতে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। দুই দিন আগেই আমরা পরিবারের সদস্যরা যখন হাসপাতালে তাকে দেখলাম তিনি উঠে দাঁড়াতে পারছিলেন না। তার বাঁ হাত আগেই বেঁকে গেছে। ডান হাতও বেঁকে গেছে প্রায়। তাঁর হাঁটুতে এবং কোমরে ব্যথা। খেতে পারছেন না। অবস্থা খারাপ থেকে খারাপ হচ্ছে। মেডিকেল বোর্ড সঠিক তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন দিতে পারছে না। এ বিষয়গুলো আমরা তুলে চিঠিতে ধরেছি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নয় মাস ধরে চিকিৎসাধীন থাকা খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড কিছুদিন আগে আদালতে সর্বশেষ যে রিপোর্ট দিয়েছিল, সেটি এবং আগের দু’টি প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য নিয়ে যেসব তথ্য এসেছে, সেগুলোও পরিবারের সদস্যদের চিঠিতে তুলে ধরা হয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, তার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাবরে পাঠানো বিএনপি নেত্রীর পরিবারের দুটি চিঠিই নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় এখন আইনগত দিক খতিয়ে দেখছে।
আনিসুল হক জানিয়েছেন, তারা চিঠিতে লিখেছেন, সম্পূর্ণ মানবিক বিবেচনায় কারাগারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মাননীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকারের নির্বাহী আদেশে লন্ডনের আধুনিক সুবিধা সম্বলিত হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ দানের আবেদন। এটি চিঠির মর্মকথা।
খালেদা জিয়ার পরিবারের একটি সূত্রও সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি চেয়ে এই আবেদন করার কথা জানিয়েছেন। সরকার বলছে, আবেদন নিয়ে এর আইনগত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পরিবার কেন এই আবেদন করেছে?
সেলিমা ইসলাম বলেছেন, যেহেতু জামিন হচ্ছে না। কিন্তু তারা পরিবারের সদস্যরা এখন খালেদা জিয়ার জীবন বাঁচানোর বিষয়কে মূল বিষয় হিসেবে দেখছেন। সে কারণে তারা এখন সরকারের কাছে আবেদন করেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। হাইকোর্ট, সুপ্রিমকোর্ট সব আদালতে কয়েকবার চেষ্টা করা হলো, কিন্তু জামিন হয় নাই। সেজন্য মানবিক কারণে আমরা বিদেশে চিকিৎসা করানোর জন্য মুক্তি চেয়ে চিঠি লিখেছি। আমরা প্যারোলে কথা লিখি নাই। এখন উনারা যে ভাবে দিতে চায়। কারণ উনার অবস্থা এত খারাপ যে যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটতে পারে।
তবে সরকার বলছে, খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে বিএনপি এবং পরিবারের পক্ষ থেকে বাড়িয়ে বলা হচ্ছে।
মাসখানেক আগে পরিবারের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে চিঠি লেখা হয়েছিল, যাতে মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার ব্যাপারে সুপারিশ করে।
পরিবারের এসব পদক্ষেপের ব্যাপারে খালেদা জিয়ার অবস্থান আসলে কী – এই প্রশ্নে সেলিমা ইসলামের বক্তব্য হচ্ছে, তারা খালেদা জিয়ার সম্মতি নিয়েই লন্ডনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য এসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
‘এখন যে অবস্থা তারতো যেকোনো ব্যবস্থাতেই রাজি হতে হবে। এই অবস্থায় তার যদি কিছু হয়ে যায়, তাহলেতো আমরা সারা জীবন মাফ পাব না।এখন আগে তার চিকিৎসা হতে হবে। তাকেতো সুস্থ হতে হবে। তার সাথে পরামর্শ করেই আমরা সরকারকে চিঠি দিয়েছি।’
যা বলছে সরকার
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন, আইনগত বিষয় খতিয়ে দেখতে তাকে পাঠানো চিঠি তিনি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, চিঠির আইনগত বিষয় খতিয়ে দেখে আমাদের আইনগত মতামত দিয়ে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তারপর সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেছেন, ‘আইনগত দিক থেকে দেখতে গেলে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় এই দরখাস্ত এসেছে বলে বিবেচনা করতে হবে। এই আইন আওতায় ফেলতে হলে তারা সাজা থেকে মওকুফ করা হোক, সেটাও তারা দরখাস্তে বলেন নাই। আমরা আইনগত সব বিষয় খতিয়ে দেখেই মতামত দেব।’
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং চ্যারিটেবল ট্রাস্ট- দুইটি দুর্নীতির মামলায় ১৭ বছরের সাজা নিয়ে খালেদা জিয়া দুই বছরের বেশি সময় ধরে জেলে রয়েছেন।
তার পরিবার এখন সরকারের কাছে মুক্তি চেয়ে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু কৌশল হিসেবে পরিবারের পদক্ষেপ থেকে বিএনপি দল হিসেবে আলাদা থাকছে।
বিএনপি তাদের রাজনৈতিক চিন্তা থেকে আদালতের মাধ্যমে এবং রাজনৈতিকভাবে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয় এগুনোর কথা বলছে। আর পরিবার মানবিক বিষয়কে তুলে ধরে তাদের মতো করে পদক্ষেপ নিচ্ছে। -বিবিসি বাংলা