করোনাভাইরাস সরকার গোপন করতে চেয়েছিল: মির্জা ফখরুল

মত ও পথ প্রতিবেদক

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার করোনাভাইরাস নিয়ে এতদিন কোনো কিছুই বলেনি। তারা খুঁজেও পায়নি, কি কারণে পায়নি জানি না। হঠাৎ করে কালকে (রোববার) খুঁজে পেয়েছে। যখন বিদেশি অতিথিরা (মুজিববর্ষ উপলক্ষে) বাংলাদেশে আসতে অপারগতা প্রকাশ করলেন তখনই এই তিনজনের নাম আসল। আমার ধারণা তারা পুরো জিনিসটাকে গোপন করার চেষ্টা করেছে। এই রোগ বাংলাদেশে অনেক আগেই এসেছে বলে অনেকেরই ধারণা। সেই ধারণাগুলো সত্যিকার অর্থে এখন প্রমাণিত হতে যাচ্ছে।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের দুটি গ্রন্থ ‘প্রগতি ও সত্যের সন্ধ্যানে’ ও ‘মূল্যবোধ অবক্ষয়ের খণ্ডচিত্র’ প্রকাশনা উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ‘দি ইউনিভার্সেল একাডেমি’ এই দুইটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছে।

universel cardiac hospital

মির্জা ফখরুল অবিলম্বে দেশের সব বিমানবন্দর, নৌ ও স্থলবন্দরে পর্যাপ্ত স্ক্যানিং মেশিন স্থাপন, আক্রান্তদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল সুনির্দিষ্ট করাসহ জনসচেতনতা সৃষ্টির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান।

খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন,যে মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া হয়েছে এ ধরনের মামলায় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা মুক্ত আছেন, জামিন পেয়েছেন। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, একই মামলায় বিচার বিভাগ যখন অন্যদের মুক্তি দেন তখন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন না কেন?

পিরোজপুরের জজ বদলির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, কোথায় বিচার বিভাগ? আইন সবার জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করে। সে অধিকারগুলো আজ কোথায়? গণতন্ত্রই যদি না থাকে, গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি ধ্বংস করে দেয়া হয় তাহলে সেখানে কিছুই গড়ে উঠে না। আজকে আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা যে স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছিলাম সেই স্বপ্ন সম্পূর্ণভাবে চুরমার হয়ে গেছে।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, এগুলো কী ধরনের অশালীন কথাবার্তা। স্বয়ং একজন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৪০০ টাকার মেজর তার একদিনের একটা বাঁশির ফুঁতে স্বাধীনতা আসেনি’। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে, একজন মেজরের বাঁশির ফুঁতে সমগ্র জাতি স্বাধীনতার জন্য এগিয়ে এসেছিল। যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আপনারা তখন কেউ পলায়ন করেছিলেন, কেউ আত্মসমর্পণ করেছিলেন।

তিনি বলেন, অন্যকে অপমান করার মধ্য দিয়ে মহত্ব গড়ে উঠে না। আজকে স্বাধীনতাযুদ্ধে যাদের অবদান আছে তাদের স্বীকার করে নেয়া উচিত ছিল। কিন্তু আমরা দেখেছি দুর্ভাগ্যক্রমে তারা (আওয়ামী লীগ) অন্য কাউকে স্বীকার করতে চায় না। না স্বীকার করতে চান তাজউদ্দিন আহমেদকে, জেনারেল ওসমানীকে, না শহীদ জিয়াউর রহমানকে। অন্যদের কথা বাদই দিলাম।

লেখক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই দুটি বই আসলে সংকলন। আমার বিভিন্ন সময়ের কিছু কলাম পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, সেই কলামের বিশেষ প্রবন্ধগুলো সংকলিত করে এই দুইটি গ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মূল্যবোধের যে চরম অবক্ষয়-হলগুলোতে টর্চার সেল, র‌্যাগিংয়ের নামে কি অনাচার-নির্যাতন হচ্ছে চিন্তাও করা যায় না। এটা কোনো সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কাংখিত ছিল না। গণতন্ত্র নেই দেশে। এই গণতন্ত্রহীনতার কারণেই আজকে সব ক্ষেত্রে অবক্ষয়, সমাজে এই পচন। মূল্যবোধের অবক্ষয়ের খণ্ডচিত্র-এই বইতে আজকে আমাদের সমাজে যে পচন লেগেছে এর কিছু কিছু চিত্র এতে তুলে ধরা হয়েছে।

তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে সরাসরি রাজনীতিতে ঢুকে মন্ত্রী-এমপি হওয়ার পরের থেকে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আমি অনেক বক্তব্য রেখেছি, যা পত্র-পত্রিকায় আমার বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমার নির্বাচিত কিছু বক্তব্যকে সংকলন করে আরেক গ্রন্থ ‘প্রগতি ও সত্যের সন্ধানে’তে সংকলিত করেছি। এই বইতে দেশের উন্নয়ন, উৎপাদন ও গণতন্ত্র, এ দেশের যা সত্য তার প্রতি আমার কমিটমেন্ট বিভিন্ন বক্তব্য উপস্থাপিত হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার খন্দকার মারুফ হোসেনের সঞ্চালনায় প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে