ব্র্যাকেটবন্দি দলে পরিণত হচ্ছে গণফোরাম

মত ও পথ প্রতিবেদক

গণফোরাম

সাধারণ সম্পাদকের পদ হারানোর পর প্রায় ১০ মাস আড়ালে ছিলেন গণফোরাম নেতা মোস্তফা মহসিন মন্টু। দলীয় সভা-সমাবেশ এমনকি গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের আশপাশে এক মুহূর্তের জন্যও দেখা যায়নি তাকে। তার এই দীর্ঘ নীরবতার মধ্যেই কেন্দ্রীয় কমিটি বাতিল, তার আগে বহিষ্কার-পাল্টাবহিষ্কারসহ বহু ঘটনা ঘটে।

ঠিক এই রকম এক নাজুক পরিস্থিতিতে গণফোরামের রাজনীতিতে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছেন মোস্তফা মহসিন মন্টু। গণফোরামের একটি অংশ মনে করছে, দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে তার এই সক্রিয় হওয়া ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ারই ইঙ্গিত। আরেকটি অংশ বলছে, দল বাঁচাতে গণফোরামের প্রতিষ্ঠাকালীন নেতারা এক হতে শুরু করেছেন। সে ক্ষেত্রে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন এ দলটি ব্রাকেটবন্দিও হতে পারে।

universel cardiac hospital

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বহিষ্কার-পাল্টাবহিষ্কারের ঘটনা ঘটে গত সপ্তাহে। এতে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে ৪ মার্চ গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেন দলটির সভাপতি সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন। এর ঠিক ৩ দিনের মাথায় তাকে না জানিয়েই আলোচনা সভার আয়োজন করে ভেঙে দেয়া কমিটির একাংশ।

গণফোরামের ব্যানারে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয় আরামবাগে ইডেন কমপ্লেক্সে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। এই সভার মধ্য দিয়ে রাজনীতির দৃশ্যপটে সক্রিয় দেখা গেল গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মসহিন মন্টুকে। দলীয় কর্মকাণ্ডে তার এই সরব হওয়ার ব্যাপারে গণফোরামের বড় অংশই খুশি।

তবে এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। রোববার তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, কারা গণফোরামের ব্যানারে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে, আমি জানি না। খোঁজখবর নিয়ে জানাব। যারাই আয়োজন করে থাকুক, আমাকে জানানো উচিত ছিল। আমি তো এখনও দলের সভাপতি।

মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে অনেকদিন রাজনীতিতে ওইভাবে ছিলাম না এটা ঠিক। তবে এটি ছিল ৭ মার্চ উপলক্ষে আলোচনা সভা। এ ছাড়া সভার সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ আমাকে দাওয়াত দিয়েছেন। তিনি গণফোরাম নেতা। একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ। আমি তার দাওয়াতে গিয়েছি। আমি একা নই, সিনিয়র আরও অনেক নেতাই উপস্থিত ছিলেন।

দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে না জানিয়ে দলীয় ব্যানারে সভা করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কমিটি ভাঙার আগে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছিল। আমি বলেছিলাম সবাইকে নিয়ে বসে সমস্যার সমাধান করতে। তিনি এতে রাজিও হয়েছিলেন। কিন্তু এরপর আমাদের কাউকে কিছুই না জানিয়ে কমিটি ভেঙে দিয়েছেন। এটা তো তিনি করতে পারেন না। তিনি বলেন, কারও একক সিদ্ধান্তে একটি রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেয়া যায় না।

এটা তো কোনো লিমিটেড কোম্পানি না। কোনো কোম্পানিতে ম্যানেজিং ডিরেক্টর যা খুশি করতে পারেন। রাজনৈতিক দলে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আলোচনা করে নিতে হয়। আমি নিজেও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, কিন্তু কমিটি ভেঙে দেয়ার বিষয়ে কিছুই জানি না।

এ অবস্থায় চলমান সংকটের সুরাহার উপায় কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ড. কামাল হোসেন সবাইকে নিয়ে আবার যদি বসেন তাহলেই হবে। আর তিনি যদি তা না করে কিছু লোকের কথামতো চলেন তাহলে এরা কাউন্টার আরেকটি পার্টি করেও ফেলতে পারেন। আমরা চাই না গণফোরামের নামে একাধিক পার্টি থাকুক। গণফোরাম ব্র্যাকেটবন্দি রাজনৈতিক দলে পরিণত হোক।

এর আগে গত ২ মার্চ গণফোরামের চার নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। পরের দিন বহিষ্কৃত ওই চার নেতা দলের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়াসহ চারজনকে বহিষ্কার করে। এই বহিষ্কার-পাল্টাবহিষ্কারের মধ্যে ৪ মার্চ ‘দলে সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা’র কারণ দেখিয়ে গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেন ড. কামাল হোসেন।

একই সঙ্গে দুই সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন তিনি। ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে কমিটির সাধারণ সম্পাদক করা হয় ড. রেজা কিবরিয়াকে। এই অচলাবস্থার মধ্যেই ৭ মার্চ উপলক্ষে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ভেঙে দেয়া কমিটির নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ।

প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু। প্রধান বক্তা ছিলেন ভেঙে দেয়া কমিটির নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতাকর্মীদের বেশিরভাগই সভায় উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্টদের মতে, গণফোরামের সিনিয়র নেতারা সংকট নিরসনে একটি সমঝোতায় আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তারা সামগ্রিক বিষয় নিয়ে দলটির সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে বৈঠকে বসারও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ড. রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে এ পদে অন্য কাউকে বসানো, দল প্রতিষ্ঠার সময় অর্থাৎ প্রথম থেকে যারা গণফোরামে ছিলেন তাদের যথাযথ মূল্যায়নসহ বেশকিছু বিষয় সুরাহার প্রস্তাব দেবেন সিনিয়র নেতারা। যদি আলোচনার টেবিলে সুরাহা না হয় তাহলে বিকল্প চিন্তা করবেন তারা। সে ক্ষেত্রে ব্র্যাকেটবন্দি হতে পারে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন দলটি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে