পায়রার চেয়ে মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরের চার লেন সড়ক নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে ১০০ কোটি টাকা বাড়তি খরচ করা হচ্ছে! পায়রায় চার লেন সড়ক নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছে ৬০ কোটি টাকা। অথচ মাতারবাড়ীতে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হচ্ছে ১৬০ কোটি টাকা।
বাড়তি এ খরচসহ ১০ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট’ নামের প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা এ ব্যয়কে ‘অত্যধিক’ মন্তব্য করে তা কমানোর প্রস্তাব করে। তবে ব্যয় না কমিয়ে পিইসির জবাবে বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলেছে, ‘প্রকল্পের অর্থায়নে জাইকার ঋণসহায়তা নেয়া হবে বিধায় তাদের প্রণীত সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষার ফলাফল অনুসারে ডিপিপির ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। সমীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নির্ধারিত নির্মাণ ব্যয় সংশোধনের জন্য জাইকার সম্মতি গ্রহণ করতে হবে। কারণ ঋণসহায়তা চুক্তি সই ও এপ্রাইজাল মিশনের সময় এ শর্ত দেয়া হয়েছিল যে, সমীক্ষা প্রতিবেদনে প্রাপ্ত ব্যয় পরিবর্তন করতে হলে জাইকার সম্মতি গ্রহণ করতে হবে।’ মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরে সংযোগ সড়ক (প্রথমত দুই লেন ও সর্বশেষ চার লেনের ২৬ দশমিক ৭ কিলোমিটার) নির্মাণ করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, এত খরচে চার লেন সড়ক নির্মাণের বিষয়টি একনেকেও আলোচিত হয়েছে। একনেক সভা শেষে অনুমোদিত প্রকল্প সম্পর্কে অবহিত করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তখন এক সাংবাদিক জানতে চান, পায়রা সমুদ্রবন্দরের তুলনায় মাতারবাড়ীতে এত বাড়তি খরচের কারণ কী?
জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘বিষয়টা নিয়ে অনেকের সংশয় ছিল। এ বিষয়ে অনেকক্ষণ আলোচনা হয়েছে। তবে এভাবে সরলীকরণ করা যায় না। কারণ, মাতারবাড়ীর ডেমোগ্রাফি আর পায়রার জমির কনফিগারেশন এক নয়। মাতারবাড়ী ভিন্ন। দ্বিতীয়ত, মাতারবাড়ী আরও পরে (২০১৬ সালের আগস্টে পায়রা বন্দর চালু হয়েছে) করা হচ্ছে। তৃতীয়ত, মাতারবাড়ী যে সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে, এটা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো। অনেক উঁচু করে করা হচ্ছে। এটাকে ফ্লাইওভারের মতো বলতে পারেন। এসব বিবেচনায় আনতে হয়েছে। সবকিছু বিবেচনায়, অনেক কিছু আলোচনার পরে জাতীয় বিবেচনায় এবং একটা সম্মানিত সংস্থা জাইকা এটির স্টাডি করেছে। যার ট্রেক রেকর্ড ভালো। সব কিছু বিবেচনায় আমরা এটা পাস করেছি।’
এম এ মান্নান আরও বলেন, ‘এটা আমাদের আরেকটি স্বপ্নের প্রকল্প বলতে পারেন। এর মাধ্যমে সমুদ্রপথে যাত্রা আরও শক্তিশালী হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক বাড়বে।’
নৌ মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে আসার পর এটি যাচাই-বাছাই করেছে এ কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ। একনেক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) শামীমা নার্গিস বলেন, ‘একনেকে এটার ওপর প্রধানমন্ত্রীও মতামত ব্যক্ত করেন। সবকিছু বিবেচনা করেই প্রকল্প পাস করা হয়েছে। কারণ এটা যদি আরও দেরি হয়, তাহলে প্রকল্পের শুরুটাই দেরি হয়ে যাবে।
- করোনা মোকাবিলায় ১০০ কোটি টাকা চায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, শিগগিরই বরাদ্দ
- করোনা : হজে গমনেচ্ছুদের অধিকাংশই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন
প্রকল্প সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ও ধলঘাটে বাস্তবায়ন করা হবে। এতে মোট খরচ ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ ১৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে দুই হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ ১৪ হাজার, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন দুই হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ ৯৪ হাজার এবং বৈদেশিক ঋণ ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ ৫ হাজার টাকা।
প্রকল্পের যৌক্তিকতায় বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে যে কয়েকটি সমুদ্রবন্দর রয়েছে, তার কোনোটিই গভীর সমুদ্রবন্দর নয়। ফলে ডিপ ড্রাফটের ভেসেল এসব বন্দরের জেটিতে ভিড়তে পারে না। তাই ডিপ ড্রাফট ভেসেলের জেটি সুবিধা নিশ্চিতের লক্ষ্যে মাতারবাড়ীতে সমুদ্রবন্দর নির্মাণ বিষয়ে অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। একটি গভীর সমুদ্রবন্দরের উন্নয়নের পাশাপাশি আধুনিক কনটেইনারবাহী জাহাজ, খোলা পণ্যবাহী জাহাজ ও তেলবাহী ট্যাঙ্কারের জেটিতে ভেড়ার সুযোগ সৃষ্টি করা, চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমানোর সঙ্গে সঙ্গে দেশের ক্রমবর্ধমান আমদানি-রফতানি চাহিদা পূরণ এবং মাতারবাড়ী ও মহেশখালী অঞ্চলে গড়ে ওঠা শিল্পাঞ্চলের পণ্য পরিবহনে সহায়তা করাই এ বন্দর প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য।