করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকার বিষয়ে শুক্রবার জুমার খুতবায় আলোচনা করার জন্য ইমাম ও খতিবদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ নিজামউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
এতে বলা হয়, চীন, ইতালি, ইরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশে তিনজন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ প্রেক্ষাপটে অনেকে গুজব, আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। জনমনে ভীতির সঞ্চার হচ্ছে। এ পটভূমিতে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিসহ সমগ্র মানবজাতিকে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা, নিরাপদ ও সতর্ক করার লক্ষ্যে ইসলামের আলোকে করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো আগামীকাল (শুক্রবার) জুমার খুতবায় দেশের সকল মসজিদে আলোচনা করার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে আক্রান্ত ব্যক্তির মসজিদে আগমন ও জনসমাগম পরিহার করার বিষয়টি ইসলামের দৃষ্টিতে জুমার খুতবায় তুলে ধরা এবং করোনাভাইরাস থেকে হেফাজতের জন্য মহান আল্লাহর দয়া, ক্ষমা ও করুণা প্রার্থনা করে বিশেষ দোয়া করার অনুরোধ করা হলো।
গত রোববার বিদেশফেরত তিন জনের শরীরে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।
তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে যে দুজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, তাদের যেকোনো দিন ছেড়ে দেয়া হবে।
এর আগে বুধবার (১১ মার্চ) সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনাও বলেছিলেন, দুজন সুস্থ হয়ে উঠছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার সতর্ক ও সজাগ রয়েছে। করোনা মোকাবিলা করতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রয়েছে তাদের।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছেই। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। বুধবার প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশ্বে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২৬ হাজার ৩শ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং ৪ হাজার ৬৩৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
এছাড়া এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ৬৮ হাজার ২৮৫ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বিশ্বের ১২৪টি দেশ ও অঞ্চলে করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র চীনের মূল ভূখণ্ডেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৭৯৬ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ১৬৯ জনের।
চীনের পর করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ইতালিতে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ৪৬২ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ৮২৭ জনের।
ইরানে এখন পর্যন্ত ৯ হাজার মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৩৫৪ জন। দক্ষিণ কোরিয়ায় এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ৮৬৯ এবং মৃত্যু হয়েছে ৬৬ জনের। ফ্রান্সে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ২৮১ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৪৮ জন।
স্পেনে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ২৭৭ এবং মৃত্যু ৫৫, জার্মানিতে আক্রান্ত ১ হাজার ৯৬৬ এবং মৃত্যু ৩। যুক্তরাষ্ট্রে ১ হাজার ৩২২ জন আক্রান্ত এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৮ জনের।
সুইজারল্যান্ডে করোনায় আক্রান্ত ৬৫২ এবং মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। জাপানে নোঙ্গর করা প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসে ৬৯৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৭ জন। অপরদিকে জাপানের বিভিন্ন স্থানে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৩৯ এবং মৃত্যু ১৫।