পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করেছে সরকারি-বেসরকারি ১১ বাণিজ্যিক ব্যাংক। এগুলো হলো- রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, রূপালী, ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংক; শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, এসআইবিএল, ঢাকা, সিটি, মার্কেন্টাইল ও ব্যাংক এশিয়া।
রোববার বিকালে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দিয়ে সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বৈঠক প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিএমবিএ একটি প্রতিনিধিদল গভর্নরের সঙ্গে শেয়ারবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকের বিশেষ তহবিল নিয়ে আলোচনা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয়, এখন পর্যন্ত ১১টি ব্যাংক তহবিল গঠন করেছে। বাকি ব্যাংকগুলো যেন দ্রুত তহবিল গঠন করে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে, এজন্য তাদের বলা হয়েছে।
বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট নেই— উল্লেখ করে মুখপাত্র আরও জানান, ব্যাংকগুলোর এসএলআর বাদ দিয়ে এখন প্রায় এক লাখ ছয় হাজার কোটি টাকার তারল্য রয়েছে। তাই ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট নেই। ইচ্ছা করলেই তারা বিনিয়োগ করতে পারবে বলে তিনি জানান।
বৈঠক শেষে বিএমবিএ’র সভাপতি সাইদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ইতোমধ্যে কয়েকটি ব্যাংক বিশেষ তহবিল গঠন সম্পন্ন করেছে। বাকিরাও যাতে দ্রুত এ তহবিল গঠন করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতিবাচক। আশা করা যায়, খুব দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াবে পুঁজিবাজার।
বাজারে ভয়াবহ দরপতন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএমবিএ’র এ নেতা জানান, করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক রয়েছে। যার প্রভাবে দেশের পুঁজিবাজার খারাপ সময় পার করছে। তবে আমরা আশা করছি, বাংলাদেশে এটি মহামারি আকার ধারণ করবে না। খুব শিগগিরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। পুঁজিবাজারও ঘুরে দাঁড়াবে।
এর আগে মন্দাবস্থা থেকে শেয়ারবাজার টেনে তুলতে স্টেকহোল্ডারদের একটি অংশের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবং সরকারের ওপর মহলের হস্তক্ষেপে গত ১০ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়া হয়।
নিজস্ব উৎস অথবা ট্রেজারি বিলবন্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো এ তহবিলের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৫ শতাংশ সুদে এ তহবিলের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে ব্যাংকগুলো, যা পরিশোধের সময় পাবে পাঁচ বছর। আর ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে ঋণ দিতে পারবে।
- করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জরুরি সার্ক তহবিল গঠনের প্রস্তাব
- যুদ্ধাপরাধী এ টি এম আজহারের ফাঁসি বহালের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেয়া এ সুবিধার পর এক মাসের বেশি সময় কেটে গেলেও তহবিল গঠনে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। ব্যাংকগুলোর এমন গড়িমসিতে শেয়ারবাজারে দরপতন হচ্ছে— অভিযোগ করেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে গত সপ্তাহের একাধিক দিন বড় দরপতন হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ ১৬ হাজার কোটি টাকা কমে যায়। আজও (রোববার) শেয়ারবাজারে বড় দরপতনে দিন শুরু হয়, যা শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।