রাজধানীর একটি বাসায় দারোয়ানের মাধ্যমে গত ৯ মার্চ বুয়া হিসেবে কাজ নেন বিউটি বেগম ময়না। পরদিন দুপুরে বাড়ির তিন সদস্যকে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করেন। বাড়িতে থাকা নগদ দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা ও প্রায় ২৫ ভরি স্বর্ণ নিয়ে পালিয়ে যান। পরে গুরুতর অবস্থায় তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে পাঁচ দিন পর শনিবার তাদের জ্ঞান ফেরে। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
একটি সংঘবদ্ধ চক্র অভিনব কায়দায় সুকৌশলে বাসা বাড়িতে বুয়া নিয়োগ দিয়ে দুর্ধর্ষ চুরি করে আসছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, বাসায় কাজের বুয়া নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে বিস্তারিত তথ্য নিন, ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি রাখুন, প্রয়োজনে বুয়ার বাড়ির নাম্বারও রেখে দিন। সন্দেহজনক হলে পুলিশকে জানান।
গ্রেপ্তাররা হলেন, বিউটি বেগম ওরফে ময়না ওরফে জান্নাতের মা, খোরশেদ আলম ওরফে মোরশেদ, আশাদুল ইসলাম, রিপনা বেগম ও ফারুক আহম্মেদ। এ সময় তাদের কাছ থেকে স্বর্ণের এক জোড়া হাতের চুড়ি, একটি লকেটসহ স্বর্ণের চেইন ও নগদ ৩০ হাজার টাকা, ছয়টি চেতনানাশক ট্যাবলেট ও ব্যবহৃত মোবাইলফোন জব্দ করা হয়।
এই ঘটনা নিয়ে আজ রবিবার দুপুরে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন ডিএমপির ওয়ারি বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ইফতেখার আহমেদ।
তিনি জানান, গেন্ডারিয়া এলাকার গৃহবধূ মোছা. ফয়জুন্নেছা বাসার দারোয়ানের মাধ্যমে গত ৯ মার্চ কাজের বুয়া হিসেবে ময়না নামে একজনকে নিয়োগ করেন। গ্রেপ্তার আশাদুল ও তার স্ত্রী রিপনা বেগম চুরির উদ্দেশ্যে চেতনানাশক ওষুধ ময়নাকে সরবরাহ করেন।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজের বুয়া ময়না চেতনানাশক ওষুধ দুপুরের খাবারের সাথে মিশ্রিত করে ভিকটিম ও তার পরিবারের সদস্যদের খাওয়ালে সবাই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এরপর আলমারিতে গচ্ছিত দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা ও ২৫ ভরি বিভিন্ন স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর চোরাইকৃত মালামাল স্বর্ণের দোকানদার গ্রেপ্তার ফারুক আহম্মেদের কাছে বিক্রি করেন।
চেতনানাশক ওষুধের তীব্রতায় অজ্ঞান সবাইকে আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের সন্দেহমূলক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া থেকে কাজের বুয়া ময়নাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিকে বাকিদের গ্রেপ্তার করা হয়।
যেভাবে সিন্ডিকেট
২০১৩ সালে একটি মামলায় হাজিরায় দিতে গিয়ে খোরশেদ-ময়না ও আশাদুল-রিপনা দম্পতির মধ্যে পরিচয়। তখন থেকে তারা সংঘবদ্ধভাবে ঢাকা ও রাজশাহীতে এই কৌশলে স্ত্রীদের বাসায় কাজের বুয়া হিসেবে নিয়োগ দিয়ে চুরির করে আসছিল। ময়না বুয়া সেজে চুরি করে ধরা পড়ার সময়ের মধ্যে রিপনা-আশাদুল দম্পতি আরেক জায়গা আরেকটি চুরির ঘটনা ঘটায়। যেটাতে একজন এখনো আইসিইউতে ভর্তি রয়েছে।
যাদের টার্গেট
বাসায় লোকসংখ্যা কম, শিক্ষিত ও সরল, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে যোগাযোগ কম এমন গৃহকর্তীদের টার্গেট করে এই চক্রটি। এরা কাজের বুয়া সেজে বাসায় ঢুকে চুরি করে। কিন্তু চেতনানাশক ওষুধের প্রায়োগিক জ্ঞান না থাকার কারণে তাদের কূটকৌশলের কারণে অনেক ভুক্তভোগী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।