বাবার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে শিশুদের কাছে চিঠি লিখেছেন মেয়ে। এই বাবা হলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর মেয়ে বাংলাদেশের চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আগামীকাল ১৭ মার্চ এ মহাপুরুষের জন্মদিন। এদিন বাবাকে নিয়ে লেখা এ চিঠি দেশের ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ কোটি ৩৬ লাখ শিশুর হাতে তুলে দেয়া হবে। পাশাপাশি প্রতিটি বিদ্যালয়ে বেলা ১১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শিশুরা এটি পাঠ করবে। এ উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রীর প্যাডে লেখা চিঠিটি অবিকল ছেপে শিশুদের হাতে তুলে দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠিটি পৌঁছায় বৃহস্পতিবার বিকালে। তখনই তা পাঠিয়ে দেয়া হয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে (ডিপিই)।
ডিপিই’র এক কর্মকর্তা জানান, মহাপরিচালকের কাছে মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মো. মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত ফরওয়ার্ডিংয়ে দুটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তা হচ্ছে- সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে চিঠিটি মুদ্রণ করে পৌঁছানো নিশ্চিতকরণ; জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ১৭ মার্চ বেলা ১১টায় সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সমাবেশে শিক্ষার্থীদের ওই চিঠিটি পাঠের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। ডিপিই বৃহস্পতিবারই চিঠিটি মুদ্রণের ব্যবস্থা নিয়েছে। আজকের মধ্যে সব বিদ্যালয়ে এটি পৌঁছানো হবে।
সূত্র জানায়, আরবি হরফে লেখা ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ দিয়ে চিঠিটি শুরু হয়েছে। এর নিচে প্রধানমন্ত্রীর লোগো। ডান পাশে লেখা আছে ‘প্রধানমন্ত্রী : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার’।
চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী শিশুদের সম্বোধন করেছেন ‘ছোট্ট সোনামণি’। লিখেছেন, ‘আমার শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা নিও। তোমার বাবা-মাকে আমার সালাম ও ভাইবোনদের স্নেহ পৌঁছে দিও। পাড়া-প্রতিবেশীদের প্রতি শুভেচ্ছা রইলো।
আজ ১৭ই মার্চ। ১৯২০ সালের এদিনে বাংলার মাটিতে জন্ম নিয়েছিলেন এক মহাপুরুষ। তিনি আমার পিতা, শেখ মুজিবুর রহমান।
বাংলাদেশ নামের এই দেশটি তিনি উপহার দিয়েছেন। দিয়েছেন বাঙালিকে একটি জাতি হিসেবে আত্মপরিচয়ের সুযোগ। তাইতো তিনি আমাদের জাতির পিতা।
দুঃখী মানুষদের ক্ষুধা-দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে নিজের জীবনের সব সুখ-আরাম বিসর্জন দিয়ে তিনি সংগ্রাম করেছেন। বারবার কারাবরণ করেছেন। মানুষের দুঃখ-কষ্ট তাঁকে ব্যথিত করতো। অধিকারহারা দুঃখী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকারে তিনি দ্বিধা করেননি।
এই বঙ্গভূমির বঙ্গ-সন্তানদের একান্ত আপনজন হয়ে উঠেছিলেন- তাই তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’।
২০২০ সালে আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। আজ শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অনেক দেশ এই জন্মশতবার্ষিকী অর্থাৎ ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন করছে। সকলকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।
প্রিয় বন্ধু, ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নিয়েছে জাতির পিতাকে। তাঁর নাম বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু ওরা পারেনি। ঘাতকেরা বুঝতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর রক্ত ৩২ নম্বর বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে-বেয়ে ছড়িয়ে গেছে সারা বাংলাদেশে।
জন্ম দিয়েছে কোটি কোটি মুজিবের। তাই আজ জেগে উঠেছে বাংলাদেশের মানুষ সত্যের সন্ধানে। ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে মিথ্যা দিয়ে দাবিয়ে রাখা যায় না। আজ শুধু বাংলাদেশ নয়, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশকে বিশ্ব চিনে নিয়েছে তাঁরই ত্যাগের মহিমায়।
সোনামণি, জাতির পিতার কাছে আমাদের অঙ্গীকার, তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়বোই। আর সেদিন বেশি দূরে নয়।
পিতা ঘুমিয়ে আছেন টুঙ্গিপাড়ার সবুজ ছায়াঘেরা মাটিতে পিতামাতার কোলের কাছে। তিনি শান্তিতে ঘুমান। তাঁর বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।
আমরা জেগে রইবো তাঁর আদর্শ বুকে নিয়ে। জেগে থাকবে মানুষ- প্রজন্মের পর প্রজন্ম- তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে। জাতির পিতার দেওয়া পতাকা সমুন্নত থাকবে চিরদিন।
তোমরা মন দিয়ে পড়ালেখা করবে, মানুষের মতো মানুষ হয়ে দেশ ও মানুষের সেবা করবে। জয় বাংলার জয়, জয় মুজিবের জয়, জয় বঙ্গবন্ধুর জয়।
ইতি, তোমারই শেখ হাসিনা।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম-আল-হোসেন মত ও পথকে বলেন, বিশ্বে বর্তমানে একটি চিঠি বেশ আলোচিত। সেটি হচ্ছে, প্রয়াত মার্কিন রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিঙ্কনের চিঠি, যা ছেলের শিক্ষককে লিখেছিলেন তিনি।
জাতির পিতাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই লেখা ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবে। বাবা সম্পর্কে মেয়ের লেখা এ চিঠি শিশুমনে গ্রথিত থাকবে।