ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির বহুল আলোচিত মেডিকেল ছাত্রী নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যায় অভিযুক্ত চার আসামির সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। নানা নাটকীয়তা শেষে আজ শুক্রবার সকালে এ চার ধর্ষকের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
ভারতীয় সময় শুক্রবার সকাল সাড়ে ৫টায় তিহার জেলে দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম কলকাতা টুয়েন্টিফোরের খবরে বলা হয়েছে- ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন নির্ভয়ার মা। তবুও দেরিতে হলেও বিচার পাওয়াতে খুশি তিনি।
শেষ মুহূর্তে চার অভিযুক্ত ভেঙে পড়েছিল বলেও খবরে উল্লেখ রয়েছে। বহুল আলোচিত এ ফাঁসি ঘিরে তিহার জেলের বাইরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আধা-সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয় জেলের বাইরে। কিন্তু নিরাপত্তা উপেক্ষা করেই জেলের বাইরে প্রচুর মানুষের ভিড় করে। গোটা তিহার জেল লক-ডাউন করে দেয়া হয়।
যাদের ফাঁসি কার্যকর করা হলো তারা হলেন- অক্ষয় ঠাকুর (৩১), পবনগুপ্ত (২৫), বিনয় শর্মা (২৬) ও মুকেশ সিং (৩২)।
ফাঁসির হাত থেকে বাঁচতে শেষ মুহূর্তে এসে সবধরনের চেষ্টা চালিয়েছেন নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের চার অপরাধী। তারা আইনজীবীদের দিয়ে বারবার সুপ্রিম কোর্টে বিভিন্নভাবে আবেদন করেছেন। এ আবেদন হয়তো টিকছে না, কিন্তু আইনি পদ্ধতিতে বিষয়টি দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করছেন তারা।
ফাঁসি কার্যকর পেছাতে নানা কৌশল অবলম্বন করেছেন তারা দীর্ঘদিন ধরেই। এ নিয়ে দেশটিতে সমালোচনাও শুরু হয়। গত ১৭ জানুয়ারি নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যায় অভিযুক্ত চার আসামির সর্বোচ্চ সাজা কার্যকরের নতুন সময় ঘোষণা করে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। ওইদিন আসামি মুকেশ সিংয়ের প্রাণভিক্ষার আবেদন দেশটির রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ নাকচ করে দেয়ার পর ১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬টায় অপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে বলে জানানো হয়েছিল।
ভারতের আইনে প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হওয়ার পর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে অন্তত ১৪ দিনের নোটিশ দেয়ার বিধান রয়েছে। সেই হিসাবে জানানো হয়, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি নয়াদিল্লির তিহার কারাগারে অভিযুক্তদের সাজা কার্যকর হবে। এর আগে দিল্লি হাইকোর্ট জানিয়েছিলেন, নির্ভয়া ধর্ষণকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত বিনয় শর্মা, মুকেশ কুমার, অক্ষয় কুমার সিং এবং পবন গুপ্তকে ২২ জানুয়ারি সকাল ৭টায় তিহার কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। কিন্তু আসামিরা একজন একজন করে প্রাণভিক্ষার আবেদন করায় সেটি কয়েক দফায় পিছিয়ে যায়।
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর দিল্লির একটি হলে সিনেমা দেখে বন্ধুর সঙ্গে বাসে ফিরছিলেন প্যারামেডিকেলের ওই ছাত্রী। ওই বাসে যাত্রী কম ছিল। একপর্যায়ে বাসচালক-সহকারীসহ অন্তত ৬ জন মিলে নির্ভয়ার বন্ধুকে পিটিয়ে হাত-পা বেঁধে বাসের পেছনের দিকে ফেলে রেখে মেয়েটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে দুজনকে দিল্লির একটি সড়কের পাশে বাস থেকে ছুড়ে ফেলা হয়।
গুরুতর আহত প্যারামেডিকেলের ওই শিক্ষার্থীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠায় দেশটির সরকার। সেখানে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৬ ডিসেম্বর মারা যায় সে। এ ঘটনায় ভারতজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। নির্ভয়ার হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে দেশটির লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে দিনের পর দিন বিক্ষোভ করতে থাকে।
নির্ভয়া হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি বাসচালক রাম সিং কারাগারে বন্দি অবস্থায় মারা যান। এছাড়া দোষী সাব্যস্ত আরেক ধর্ষক অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় আদালতের নির্দেশে তাকে তিন বছরের জন্য কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। ২০১৫ সালে সাজার মেয়াদ শেষে এ তরুণ মুক্তি পাওয়ার পর আবারও ভারতে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে দেশটির ধর্ষণের সাজার আইন পরিবর্তন করে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সীদেরও ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ হিসেবে বিবেচনা করার বিধান করা হয়।
২০১৩ সালে দেশটির দ্রুত বিচার আদালত বাকি চার ধর্ষকের সর্বোচ্চ সাজা ঘোষণা করেন। পরে দেশটির হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগও ওই সাজা বহাল রাখেন।