শিক্ষাবিদ ড. বোরহান উদ্দীন খান জাহাঙ্গীর আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

ড. বোরহান উদ্দীন খান জাহাঙ্গীর।
ড. বোরহান উদ্দীন খান জাহাঙ্গীর। ফাইল ছবি

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপি’র বড় ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য একুশে পদকপ্রাপ্ত ড. বোরহান উদ্দীন খান জাহাঙ্গীর (৮৪) না ফেরার দেশে চলে গেছেন (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)।

বার্ধ্যক্যজনিত কারণে আজ সোমবার পৌনে ১২টার দিকে ঢাকার গুলশানে নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন এ বিশিষ্ট লেখক ও চিত্র সমালোচক।

তিনি সোমবার পৌনে ১২ টায় ঢাকার গুলশানে নিজ বাসভবনে বার্ধ্যক্যজনিত কারণে মৃত্যু বরন করেন। মৃত্যুকালে তিনি ১ ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

সোমবার বাদ আছর তাঁর নিজ গ্রামের বাড়ী চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার গুলবাহার আশেক আলী খান স্কুল ও কলেজ মাঠে জানাজা শেষে গুলবাহার খান বাড়ীর পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর মরদেহ দাফন করা হয়।

তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর‌্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এবং মত ও পথ সম্পাদক সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।

উলে্লখ্য

ড. বোরহান উদ্দীন খান জাহাঙ্গীর ১৯৩৬ সালের ৯ জানুয়ারী তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার গুলবাহার গ্রামে জম্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম আশেক আলী খান এবং মাতার নাম সুলতানা বেগম। তিনি ১৯৫০ সালে ঢাকা সরকারি মুসলিম হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৫২ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। তিনি পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে ১৯৫৫ সালে স্নাতক এবং ১৯৫৬ সালে স্নাতকোত্তর সম্মান অর্জন করে। সত্তরের দশকে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য ইংল্যান্ড যান এবং সেখানে ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

কর্মজীবন:

বোরহান উদ্দীন খান কর্মজীবন শুরু করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করে। পরে তিনি এই বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এই বিভাগের অধ্যাপকের পদ থেকে অবসর নিয়েছেন এছাড়া তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

সাহিত্য জীবন:

বোরহান উদ্দীন খানের সাহিত্য জীবন শুরু হয় তার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে। সেই সময়ে তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। ১৯৫০ সালে প্রকাশিত নতুন কবিতা কাব্য সংকলনের সর্বকনিষ্ঠ কবি ছিলেন তিনি। এই সংকলনে অন্য কবিরা ছিলেন পঞ্চাশের অন্যতম কবি শামসুর রাহমান, হাসান হাফিজুর রহমান, ও আলাউদ্দিন আল আজাদ। ১৯৮৩ সালে ডানা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয় তার প্রবন্ধ সংকলন মাইকেলের জাগরণ ও অন্যান্য প্রবন্ধ। এতে ১০টি প্রবন্ধ রয়েছে। এই প্রবন্ধের মূল বিষয়বস্তু ছিল মাইকেল মধুসূদন দত্তের আধুনিকতায় উত্তরণ, তার ভাষাশৈলী, দর্শন এবং সাহিত্যের মূল্যায়ন। ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত হয় তার কবিতার বই আমাদের মুখ। কবি শামসুর রাহমান তার এই কাব্যগ্রন্থ প্রসঙ্গে বলেন, “তার কবিতা সকলের কবি থেকে আলাদা এবং তার কবিতায় তার নিজের উপস্থিতি বিদ্যমান।” ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত হয় তার লেখা মানুষের বুকের মধ্যে কাব্যগ্রন্থ। এই গ্রন্থে ৪০টি কবিতা রয়েছে ২০০৭ সালে প্রকাশিত হয় এলুয়ার যেমন ভাবতেন। এই কাব্যগ্রন্থে ৩৩টি কবিতা রয়েছে।

পুরস্কার:

তিনি ১৯৬৯ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার, ১৯৮৬ সালে ইউনেস্কো ও ফ্রান্স কর্তৃক ফল অব অনার, ২০০৫ সালে কলকাতার মুজাফফর আহমেদ স্মৃতি পুরস্কার ও ২০০৯ সালে শিক্ষা ও গবেষনায় বিশেষ অবদান রাখায় একুশে পদক পুরস্কার গ্রহন করেন।।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে