দুই বছর দেড় মাস বা ৭৭৪ দিন কারাভোগের পর শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে তার বয়স বিবেচনায় মানবিক কারণে সরকার খালেদাকে মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিএনপি নেতারা এর প্রতিক্রিয়ায় বলছেন, সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। সেজন্য তাদের ধন্যবাদ।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান। রায় ঘোষণার পর খালেদাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর এই মামলায় আপিলে তার আরও পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট।
একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন একই আদালত। রায়ে ৭ বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
পরে কারান্তরীণ অবস্থায়ই চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নেয়া হয় খালেদা জিয়াকে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শেষে তাকে আবারও কারাগারে পাঠানো হয়। এভাবে কয়েক দফায় তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এবং হাসপাতাল থেকে কারাগারে নেয়া হয়। সবশেষ গত বছরের ১ এপ্রিল তাকে তৃতীয় দফায় হাসপাতালটিতে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালের ৬২১ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন।
মামলা দু’টি ষড়যন্ত্রমূলক বলার পাশাপাশি বিএনপি নেতারা খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এক্ষেত্রে তারা আদালতেও আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বরাবরই বিফল হতে হয়েছে বিএনপির নেতৃত্বকে।
এর মধ্যে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে বিএনপি নেতারা খালেদার মুক্তির জোর দাবি তোলেন। বিশ্বজুড়ে যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, তাতে করোনাভাইরাসে ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। সেজন্য ৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়াকে এখনই মুক্তি দেয়া প্রয়োজন বলে মতামত দেন তারা।
এর মধ্যে মঙ্গলবার বিকেলে গুলশানে নিজ বাসায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে তার বয়স বিবেচনায় মানবিক কারণে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি বলেন, বিদেশ না যাওয়ার শর্তে ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১ ধারার ১ উপধারা মতে ৬ মাসের জন্য খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তাকে মুক্তি বিষয়ে মতামত দিয়েছি। মতামত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে তাকে মুক্তির বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার বয়স বিবেচনায় এবং মানবিক কারণে তার দণ্ডাদেশ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে এসময় তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন। দেশের বাইরে গমন করতে পারবেন না। আর আজকের পরিপ্রেক্ষিতে (কোভিড-১৯ পরিস্থিতি) কাউকে বিদেশে যেতে বলা মানে তাকে সুইসাইড (আত্মহনন) করতে বলা।
বাসায় অসুস্থ হলে তিনি কীভাবে চিকিৎসা নেবেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসার যদি দরকার হয় তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে মানসম্মত হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) আছেনই। সেখানে তার চিকিৎসা চলছেই। আর ভবিষ্যতে এ বিষয়টি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বোঝা যাবে।
সরকারের সিদ্ধান্ত কখন থেকে কার্যকর হবে? জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, যখন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে মুক্তি দেবে তখন থেকে।
এ সিদ্ধান্ত জানার পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যেভাবেই হোক তার চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ দেয়া দরকার। আপাতত এটুকুই বলা ছাড়া আর কিছু বলতে পারছি না। পুরো আদেশটা জানার পর প্রতিক্রিয়া দেব।’
অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। সেজন্য তাদের ধন্যবাদ।’