প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকার ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। এ সময় জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বিবেচনায় পোশাক কারখানাগুলোও বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
বৃহস্পতিবার এক বার্তায় এ আহ্বান জানান বিজিএমইএ’র সভাপতি ড. রুবানা হক।
তিনি বলেন, সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত অফিস-আদালত ছুটির সাথে সমন্বয় করে পোশাক কারখানাও বন্ধ রাখতে মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। তবে যেসব কারখানায় করোনার সরঞ্জামাদি, মাস্ক চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) এবং করোনা প্রতিরোধী সামগ্রী তৈরি হচ্ছে, এমন কারখানাগুলোকে তাদের শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অনুরোধ করছি।
লিখিত বক্তব্যে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আমরা প্রথমে যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে তাদের সবার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। মহান স্বাধীনতা এবং জাতীয় দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী আমাদের সবাইকে সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। সবার সুরক্ষার এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য কিছু সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসরণ করে সর্ববৃহৎ শিল্প হিসেবে আমাদের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত। এমতাবস্থায় কারখানা বন্ধ দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে আশা করি।
এর আগে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। তবে এসময় খাদ্যপণ্য, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনের শিল্প কারখানা খোলা থাকবে। এজন্য অবশ্যই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে শতভাগ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে শিল্প সচিব আব্দুল হালিম জানান, সরকার ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের অফিস বন্ধ রাখার কথা বলেছে। তবে এখন পর্যন্ত খাদ্যপণ্য, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়নি। এসব শিল্প কারখানা চালু রাখতে পারবে। তবে অবশ্যই করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শতভাগ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো কম্প্রোমাইজ বা ছাড় দেয়া যাবে না।
এদিকে বুধবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিলের ঘোষণা দেন ।
প্রধানমন্ত্রীর তার ভাষণে বলেন, করোনার কারণে আমাদের শিল্প উৎপাদন এবং রফতানিবাণিজ্যে আঘাত আসতে পারে। এই আঘাত মোকাবিলায় আমরা কিছু আপদকালীন ব্যবস্থা নিয়েছি। রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য আমি ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করছি। এ তহবিলের অর্থ দ্বারা কেবল শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাবে।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, পোশাকশিল্পের এই ক্লান্তিলগ্নে যখন লাখ লাখ শ্রমিক অনেক ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছিলেন; ঠিক তখনই তার (প্রধানমন্ত্রীর) এই সময়োচিত ঘোষণা। শ্রমিকদের বেতন বাবদ ৫ হাজার কোটি টাকার এ তহবিল তাদের জীবন বাঁচাবে। তাই পোশাকশিল্পসহ গোটা রফতানিমুখী খাতের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এমন উদ্যোগে শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ নিয়ে গার্মেন্টস মালিকরা কিছুটা ভারমুক্ত হলেন। প্রতিমাসে শ্রমিকের মজুরি বাবদ ৪ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয় রফতানিমুখী পোশাক কারখানা মালিকদের।