২৬ মার্চ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য উজ্জ্বলতর দিন

সম্পাদকীয়

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। ফাইল ছবি

২৬ মার্চ জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য উজ্জ্বলতর দিন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলন, এমনকি জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলকে অগ্রাহ্য করে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী অতর্কিতে সারাদেশে শুরু করেছিল বর্বর গণহত্যা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, ইকবাল হল, রোকেয়া হল, শিক্ষক আবাসিক এলাকা, পিলখানার ইপিআর সদরদপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে একযোগে নৃশংস নারকীয়তা চালিয়ে অগণিত নিরস্ত্র দেশপ্রেমিক ও দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করে। সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলার আপামর জনগণ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তৎকালীন অস্থায়ী মুজিবনগর সরকারের অধীনে পরিচালিত দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বিশ্বমানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের।

১৯৪৭ সালে তথাকথিত দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভক্তির পর আমাদের এতদঞ্চলের বাসিন্দাদের উপর যে অপ্রত্যক্ষ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ ও নির্যাতন চাপিয়ে দেওয়া হয় তার বিরুদ্ধে পূর্ববঙ্গের সংগ্রামী জনতার আন্দোলন গর্জে উঠেছে বার বার। বাঙালি জাতির অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই পুরোদমে শুরু হয়েছিলো ৭১’এর ২৬ র্মাচ, এই প্রতিরোধ যুদ্ধই সূচনা করে মহান মুক্তিযুদ্ধের।

১৯৭১-এ বীর বাঙালির তাজারক্তে আর অসংখ্য মা বোনের অশ্রুধারায় ভেসে গিয়েছিল এই দেশের মাটি।তবু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় বাংলার বিদ্রোহী জনতা সেদিন অকুতোভয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রামে। ১৯৭১ সালের সেই মহান সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে মুক্তিকামী মানুষেরা স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যকে ছিনিয়ে এনেছিল। সেই সংগ্রামের অভিসংবাদিত নেতা ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তাঁকে ৪ হাজার ৬৭৫ দিন জেলে কাটাতে হয়েছিল। কয়েকবার ফাঁসিকাষ্টের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি, অসংখ্য মিথ্যা মামলায় কারাবরণ করেছেন। তারপরও স্বাধীনতা অর্জনের প্রশ্নে কোন আপোস করেননি। তিনি বাংলার মানুষকে দিয়েছেন একটি স্বাধীন ভূখণ্ড, একটি পতাকা, একটি মানচিত্র, জাতীয় সংগীত, সংবিধান, বিশ্বে বুক ফুলিয়ে চলার গর্বিত পরিচয়।

আরও পড়ুন >> শতবর্ষের শত সংগ্রাম শেষে

এবার মহান স্বাধীনতা দিবস জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে উদযাপিত হচ্ছে।আমরা মনে করি বাংলা, বাঙালি ও বঙ্গবন্ধু একটি অভিন্ন সত্ত্বা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে গরিব-দুঃখী-মেহনতী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের লক্ষ্য। তিনি জেল-জুলুম-হুলিয়াকে মাথায় নিয়ে বাংলার কৃষক-শ্রমিক জনতার মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন।আজ মহান স্বাধীনতা দিবসে বঙ্গবন্ধুর সেই সংগ্রামী অবদানকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি। সেই সাথে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্কারী বীর শহীদদেরও স্মরণ করি যারা দেশমাতৃকার বেদীমূলে আত্মাহুতি দিয়েছেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে