এপিডেমিক সিমুলেশন টুলস। এই টুলসের মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে বা এলাকায় করোনা ভাইরাস কীভাবে বিস্তার লাভ করতে পারে, তা অনুমান করা সম্ভব। এর মাধ্যমে সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা এবং প্রাদুর্ভাব কমে আসতে কী পরিমাণ সময় লাগতে পারে, সে সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যাবে। শুধু করোনা নয়, যে কোনো মহামারি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে এ টুলস ব্যবহার করে। এই সিমুলেশনের ফল জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সরকারের আগাম করণীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।
জানা যায়, ২৬ মার্চ এই টুলসটি তৈরির কাজ শেষ হয়। টুলসটি তৈরির গবেষণার কাজে যুক্ত রয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের স্নাতকোত্তর বিভাগের শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বী ও সাব্বির পারভেজ।
টুলসটি তৈরির বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন গবেষক ফজলে রাব্বী। তিনি বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা দেশি-বিদেশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করেন, তারা ব্যবহার করতে চাইলে এজন্য সহযোগিতা করব। এটা বাণিজ্যিক কিছু না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো প্রতিষ্ঠান এগুলো ব্যবহার করে। এটা আমরা করছি, আমাদের দেশেও যদি প্রতিষ্ঠানগুলো এরকম চায়, তারা দেশের জন্য এটা করলে পলিসি গ্রহণ করার জন্য সুবিধা হবে। করোনাসহ অন্যান্য মহামারিটা কত দূর বিস্তার লাভ করবে, কী পদক্ষেপ নিলে ঠেকানো যাবে, কত দিনের মধ্যে ঠেকানো যাবে– এরকম বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসার জন্য এটা সহযোগিতা করবে।’
এক বিজ্ঞপ্তিতে গবেষকরা বলেন, এই সিমুলেশন টুলসের বিভিন্ন ইনপুট প্যারামিটার যেমন ট্রান্সমিশন প্রবাবিলিটি, পার ডে কন্টাক্ট ইত্যাদির ব্যাপারে মেডিকেল বা পাবলিক হেলথ এক্সপার্টদের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ প্রয়োগ ঘটিয়ে কোনো মহামারি কীভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা যেতে পারে, তা সিমুলেশন করা সম্ভব। এই গাণিতিক রোগতত্ত্ব ব্যাবহারের মাধ্যমে সহজেই রোগের বিস্তার নির্ণয়, বিভিন্ন ঝুঁকি মোকাবিলা এবং আইসোলেশন-কোয়ারেন্টাইন ইত্যাদির বিষয়ে পলিসি নির্ধারণ করে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সাসেপ্টিবল, এক্সপোজড, ইনফেকশাস ও রিকভারি (এসইআইআর)-ভিত্তিক এপিডেমিক ডিজিজ মডেলিং তত্ত্ব অনুসরণ করে এই সিমুলেশন টুলস উদ্ভাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জন হপকিনসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এ ধরনের মডেল ব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে মহামারি সংক্রান্ত পূর্বাভাস প্রদান এবং পলিসি গ্রহণ করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বর্তমানে আমাদের দেশের করোনা ভাইরাসের সংকট উত্তরণের জন্য আমরা যে ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছি তার সোর্স কোড এবং ডকুমেন্টেশন উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যাতে অন্যান্য আগ্রহী গবেষকরা এই সিমুলেশন টুলসের পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও উন্নয়নে অবদান রাখতে পারেন। আগ্রহী গবেষক বা কোনো সংস্থা আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা তাদের এই সিমুলেশন টুলস ব্যবহার করার সুযোগ অথবা সোর্স কোড দেব।