প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কিন্তু উপায় নেই বলে কাগজ কুড়াতে বের হয়েছিলেন প্রায় ৬০ বছরের এক বৃদ্ধ। তাকে দেখে পুলিশ এগিয়ে যায়। সঙ্গে ছিলেন জেলা প্রশাসক (ডিসি)। ভীতসন্ত্রস্ত বৃদ্ধ ডিসিকে দেখেই করজোড় করে ক্ষমা চান। নিজের অপারগতার কথাও প্রকাশ করেন কাগজে জীবিকা নির্বাহ করা এ বৃদ্ধ। আবেগ আপ্লুত ডিসি তখন চাল-ডাল কেনার টাকা দিয়ে ওই বৃদ্ধকে বাড়ি পাঠান।
শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রাজশাহীর তানোর উপজেলা সদরে এ ঘটনা ঘটে। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করে বিষয়টির বিবরণ দিয়েছেন রাজশাহীর ডিসি হামিদুল হক। এটি ফেসবুকে রীতিমতো ভাইরাল। মানবিক এমন কাজে প্রশংসায় ভাসছেন ডিসি হামিদুল হক।
তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, করোনা পরিস্থিতিতে লোকজনের বাড়িতে অবস্থান পর্যবেক্ষণের জন্য তানোর উপজেলা পরিদর্শনে যাই। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, তানোর পৌরসভার মেয়র, অফিসার ইনচার্জসহ তানোর বাজার পরিদর্শন। অকারণে যে সব লোকজন বাজারে ছিলেন তাদের বাজার থেকে সরিয়ে দিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে উপজেলার দিকে যাওয়া। এ সময় হঠাৎ ষাটোর্ধ্ব একজন বৃদ্ধ মানুষকে রাস্তার ধারে কিছু পুরনো, ছেড়া কাগজ নাড়াচাড়া করতে দেখে কাছে যাই।
ডিসি আরও লেখেন, আমরা কাছে যেতেই এবং সাথে পুলিশ দেখে তিনি কিছুটা ভয় পেয়ে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘বাবা আমার যদি কোনও ভুল হয়, মাফ করে দাও, আমি আর বাজারে আসবো না।’ আমি সাথে সাথে বৃদ্ধকে বললাম কোনও ভুল না। ভীষণ মায়া লাগলো বৃদ্ধকে দেখে। এ বয়সে তার ঘরে থাকার কথা। নাতিপুতিদের সাথে খেলা করার কথা। কিন্তুদারিদ্র্যতা তুমি তাকে এই চৈত্রের প্রখর রৌদ্রে ক’টি টাকার জন্য, সামান্য চাল কেনার অর্থের জন্য কিছু ছেড়া কাগজ কুড়াতে বাধ্য করেছো। তার উপর বিশ্ব কাপানো করোনা। কিন্তু এই বৃদ্ধের দারিদ্র্যতাকে করোনা পরাজিত করতে পারেনি। তাকে আটকিয়ে রাখতে পারেনি ঘরের কোণে।
হামিদুল হক লেখেন, বৃদ্ধকে সামান্য আর্থিক সহায়তা দিয়ে বললাম, আপনি কিছু চাল-ডাল কিনে বাড়ি চলে যান। কিছুদিন আর বাজারে আসবেন না। তিনি বললেন, বাবা আর আসবো না। মনটি খারাপ হয়ে গেলো। জানি না তার বাড়িটি কেমন, তার বাড়িতে কে কে আছেন! উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিতে বললাম।
বৃদ্ধের মঙ্গল কামনা করে ডিসি লেখেন, হায় করোনা! তুমি সকলকে একটু করুণা করো। অন্তত নাম না জানা এই বৃদ্ধের কোন ক্ষতি করো না। এই মিনতি করি। সৃষ্টিকর্তা সবাইকে ভালো রাখুন। সারা বিশ্ব হোক করোনা ও করুণামুক্ত। ভালো থেকো বৃদ্ধ বাবা। আমি তোমার খবর রাখবো নিশ্চয়।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, বৃদ্ধ দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেননি। দারিদ্রতার নির্মমতাকে সাক্ষী রেখে তিনি আত্মসমর্পণ করেছেন। এমন করে কয়জন! তার আত্মসমর্পণ আমাদের সবাইকে আবেগ আপ্লুত করেছে। আমরা তার খেয়াল রাখবো। শনিবার সকালেও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে ওই বৃদ্ধের খোঁজ নিয়েছি।
- আরও পড়ুন >> করোনায় আক্রান্ত হলেন রানি ২য় এলিজাবেথ
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, আমরা ওই বৃদ্ধের নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছি। প্রাথমিকভাবে যতটুকু জানা গেছে, তার বাড়ি মোহনপুরে। অনেকটা মানসিকভাবে অসুস্থ। শুক্রবার ও মঙ্গলবার তানোরে হাট বসে। এই দুদিন তিনি এসে কাগজ কুড়িয়ে নিয়ে যান। তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর সাধ্যমতো সহায়তা দেয়া হবে বলেও জানান সুশান্ত কুমার মাহাতো।