গুজবে আমরা পিছিয়ে পড়ছি

জুবায়ের আহমেদ

ফাইল ছবি

বাংলাদেশে সময়ে সময়ে গুজবের শেষ নেই। ধর্মীয় বিধান মতে কোনো তথ্য পাওয়ার পর তার সত্যতা না পাওয়া পর্যন্ত প্রচার করতে নিষেধ করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবেও গুজব ছড়ানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। গুজব বিষয়ে সরকারি-বেসরকারিভাবে বহু সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হলেও গুজব প্রিয় জাতির বদনাম আমরা ঘুচাতে পারিনি, বরং বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর প্রভাবে গুজব যেন রকেট গতিতে ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। ব্রিজ নির্মাণে মানুষের মাথা লাগবে, ছেলে ধরা, চাঁদে মানুষ দেখা যায়, এই জনস্বপ্নে ওষুধ পেয়েছে, স্বপ্নে মানুষকে ধর্মকর্ম করার তাগিদ দিয়েছে, না হয় পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে, এই লিফলেট ছিঁড়ে ফেললে বড় ক্ষতি হয়ে যাবেসহ এমন কোনো ভিত্তিহীন গুজব নেই যা বাংলাদেশে রটে না। গত বছর পদ্মা সেতুতে মাথা লাগবে এমন গুজব এবং ছেলে ধরা গুজবে কয়েকজন নিরীহ মানুষকে গণধোলাই দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে, যারা পরবর্তী সময় নিরীহ নির্দোষ ছিলেন মর্মে প্রমাণ হয়েছে।
সম্প্রতি করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত পুরো বিশ্ব। চীনের উহান প্রদেশে প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। পৃথিবীর ২০১ দেশে ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে উন্নত দেশগুলো যেখানে করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করছে, সেখানে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর আগেই লোকজন রাস্তাঘাটে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার হোমিওপ্যাথিক-বনাজি ওষুধ বিক্রি করছে। কেউ কেউ ছড়িয়েছে যে, এই ধর্মের লোকের হবে না, ওই ধর্মের লোকের হবে এবং বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস আসবে না। জনৈক প্রবাসীকে করোনা ভাইরাস স্বপ্নযোগে সাক্ষাৎকার দিয়েছে কীভাবে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকা যায়সহ নানা প্রকার বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে দেশব্যাপী।
চীনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস অবশেষে গত ৯ মার্চ বাংলাদেশেও প্রবেশ করেছে। দিন দিন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। কয়েকজনের মৃত্যুও হয়েছে। আবার অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সরকার দেরিতে হলেও প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিসহ তারকা ব্যক্তিত্বরাও মানবতার সেবায় এগিয়ে আসছে একে একে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করার সবচেয়ে বড় উপায় ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ বা নিজেদের গৃহের মধ্যে আবদ্ধ রাখা হলেও এ নিয়ম মানছে না অনেকেই। সেই সঙ্গে গুজব ছড়াচ্ছে একটি শ্রেণি। থানকুনি পাতা খেলে করোনা সেরে যাবে, নারিকেল গাছের গোড়ায় পানি ঢাললে করোনা সেরে যাবে, কোনো শিশু জন্মের পর চিনি ছাড়া রং চা খেলে করোনা সেরে যাবে বলেই মৃত্যুবরণ করেছেসহ নানা প্রকার গুজব ছড়িয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে একটা শ্রেণি, এতে সাড়া দিচ্ছে বহু মানুষ, যাদের মাধ্যমে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে গুজব, হয়রানির শিকার হচ্ছে বহু মানুষ গুজব যা কাম্য নয়।
বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। আর ধর্মপ্রাণের সূত্রেই বহু মানুষ ধর্মান্ধ। ধর্মীয় বিধান মতে কোনো তথ্য প্রচারের আগে সত্যতা বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া জরুরি হলেও তা মানা হয় না বাংলাদেশে, ফলে সহজেই যে কোনো প্রকার বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেয়া যায়। দেশব্যাপী শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বাড়লেও শুধু অশিক্ষিত ব্যক্তিরাই যে গুজব ছড়ায় তা নয়, ক্ষেত্রবিশেষ ও গুজবের ধরন বুঝে সব শ্রেণির মানুষেই গুজবে কান দেয়। ধর্মীয়ভাবে গুজব ছড়ানো নিষেধ, গুজব গুনাহের কাজ। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রীয়ভাবেও গুজব ছড়ানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ধর্মীয় বিধান জানার ও বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসারের যুগে এসেও বাংলাদেশের মানুষ সৃষ্টিশীল ও গবেষণাধর্মী কাজে নিজেদের নিয়োজিত না রেখে কুসংস্কার ও ভিত্তিহীন কর্মকাণ্ডে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে, যা ১৯৭১-এর ভুবনজয়ী গৌরবান্বিত ইতিহাসের বিপরীত হয়। কাজেই সঠিক তথ্য না জেনে এবং কেউ কোনো কিছু প্রচার করলেই তাতে কান না দিয়ে বিবেক বুদ্ধি খাটিয়ে সত্যতা যাচাই করে এবং ধর্মীয়-রাষ্ট্রীয় বিধান অনুসারে চলা এবং দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে প্রত্যেককেই গুজব প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে কুসংস্কার ও গুজবকে মাটিচাপা দিয়ে সৃষ্টিশীল কাজে নিজেদের নিয়োজিত রাখার বিকল্প নেই।

শিক্ষার্থী, বিজেম, ঢাকা।
lawoptimajobayer@gmail.com

universel cardiac hospital

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে