বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এখন আর তার ফাঁসির রায় কার্যকরে কোনো বাধা থাকলো না। রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বৃহস্পতিবার সকালে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, বুধবার রাতে আবদুল মাজেদের প্রাণভিক্ষার আবেদনটি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পৌঁছায়। পরে রাষ্ট্রপতি আবেদনটি খারিজ করে দেন।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন আবদুল মাজেদ। তার আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে যায়।
বুধবার দুপুরে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ হেলাল চৌধুরী তার মৃত্যুপরোয়ানা জারি করেন।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী গতকাল বেলা সোয়া একটায় কারা কর্তৃপক্ষ আসামিকে আদালতে হাজির করে। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটররা আসামি গ্রেপ্তার দেখানোসহ আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করার আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত আসামি আব্দুল মাজেদকে গ্রেপ্তারসহ মৃত্যু পরোয়ানার আবেদন মঞ্জুর করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মোসাররফ হোসেন কাজল জানান, মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে যাওয়ার পর কারা কর্তৃপক্ষ ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এর মধ্যে আসামিকে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়ে অবহিত করা হবে, পাশাপাশি জেলা প্রশাসককে অবহিত করবে।
আবদুল মাজেদকে গত সোমবার রাতে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে ঢাকা সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়। এরপর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার না দেখানো পর্যন্ত জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে আটক রাখার আবেদন করেন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. জহুরুল হক।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) এ এম জুলফিকার হায়াত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর আলোচিত এই খুনি ২৩ বছর ধরে কলকাতায় অবস্থান করছিলেন। তিনি গত ১৬ মার্চ ঢাকায় ফিরেছেন।
আবদুল মাজেদ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আরও কয়েকজন খুনির সঙ্গে ব্যাংকক হয়ে লিবিয়া চলে যান। এরপর তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান তাকে সেনেগালের দূতাবাসে বদলি করেন। ১৯৮০ সালে দেশে ফিরে আসার পর মাজেদকে বিআইডব্লিউটিসিতে চাকরি দেন জিয়া। সে সময় উপসচিব পদমর্যাদায় তিনি চাকরি করেন। আর সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যান। পরে তিনি সচিব পদে পদোন্নতি পান। পরে যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ে পরিচালক পদে যোগদান করেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার শুরু করে। সে সময় আত্মগোপনে চলে যান মাজেদ।
মাজেদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর এখন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ খুনি পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন খন্দকার আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, এ এম রাশেদ চৌধুরী। তারা সবাই সাবেক সেনা কর্মকর্তা।