প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের মহামারি থামছেই না। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে গাছের পাতার মতো ঝরছে প্রাণ। গত একদিনে সাত হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এই ভাইরাস। একই সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় নব্বই হাজার মানুষ।
শুক্রবার সকাল পর্যন্ত করোনায় বিশ্বব্যাপী নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৫ হাজার ৭২২ জনে এবং আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ লাখ ৩ হাজার ৭১৯ জন। অপরদিকে ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৬৫৬ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে এই মহামারি শুরু হলেও এখন ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে আরও ভয়াবহ আকার নিয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যায় সবার ওপরে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৫৬৬ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৬ হাজার ৬৯১ জনের।
মৃত্যুর দিক দিয়ে সবার ওপরে রয়েছে ইতালি। দেশটি যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। ইতালিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৪৩ হাজার ৬২৬ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৮ হাজার ২৭৯ জনের।
আক্রান্তের দিক দিয়ে ইতালিকে পার করে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে স্পেন। সেখানে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৫৩ হাজার ২২২ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৫ হাজার ৪৪৭ জনের। এ তথ্য জানিয়েছে করোনাভাইরাস নিয়ে লাইভ আপডেট দেয়া ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার।
চীনের উহান থেকে বিস্তার শুরু করে গত তিন মাসে বিশ্বের ২০০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। চীনে করোনার প্রভাব কমলেও বিশ্বের অন্য কয়েকটি দেশে মহামারি রূপ নিয়েছে।
এই ভাইরাসে চীনের মূল ভূখণ্ডে আক্রান্ত হয়েছেন ৮১ হাজার ৯০৭ জন। আর মারা গেছেন ৩ হাজার ৩৩৬ জন। দেশটিতে নতুন করে ৪২ জন শনাক্ত হয়েছেন তারা সবাই বিদেশি। চীনের মূল ভূখণ্ডে অনেকদিন থেকে করোনায় নতুন করে কেউ আক্রান্ত হননি। যে উহান থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছে সেখানের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে গত বুধবার (৮এপ্রিল)। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নেয়া হয়েছে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ। অধিকাংশ দেশেই মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে মানুষের চলাফেরার ওপর বিভিন্ন মাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। কোনো কোনো দেশে আরোপ করা হয়েছে সম্পূর্ণ লকডাউন, কোথাও কোথাও আংশিকভাবে চলছে মানুষের দৈনন্দিন কার্যক্রম। এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকার প্রায় অর্ধেক মানুষ চলাফেরার ক্ষেত্রে কোনো না কোনো মাত্রায় নিষেধাজ্ঞার ওপর পড়েছেন।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর ব্যাপক চাপ পড়ার কারণে কিছুদিনের মধ্যেই অনেক দেশেই স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা সরঞ্জাম ও চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের ঘাটতি দেখা যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। নিউমোনিয়ার মত লক্ষণ নিয়ে নতুন এ রোগ ছড়াতে দেখে চীনা কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।
করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। উপসর্গগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মত। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে ডেকে আনতে পারে মৃত্যু।