বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর মঙ্গল কামনায় এবং কর্মহীন খেটে খাওয়া অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দলীয় নেতা-কর্মী এবং সমাজের বিত্তবানদের আহ্বান জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এই আহ্বান জানান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, প্রিয় ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী আপনারা জানেন কোভিট-১৯ বা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এখন বিশ্বব্যাপী দেখা দিয়েছে। যার প্রাদুর্ভাব বিগত ১০০ বছরের মধ্যে এটি এই প্রথম দেখা দিয়েছে এবং সমগ্র পৃথিবীকে তছনছ করে ফেলেছে। আমাদের বাংলাদেশকেও এটি তছনছ করার জন্য উদ্যত হামলা চালিয়েছে। আপনারা জানেন যে করোনা প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদেরকে যেসমস্ত গাইডলাইন দিয়েছে সেই গাইডলাইন মেনে চলা আমাদের উচিত। তেমনিভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১ ট নির্দেশনা দিয়েছেন, সেই নির্দেশনাগুলো ফলো করে যদি আমার চলি তাহলে কোভিট-১৯ এর ফলে যে বিপদ এসেছে, তা থেকে আমরা নিজেদেরকে অনেকটাই নিরাপদ রাখতে পারবো।
তিনি বলেন, এটি একটি বড় ধরনের বিপদ এইজন্য যে এই রোগের ওষুধ বিজ্ঞানীরা এখনও আবিষ্কার করতে পারেননি। এটির চিকিৎসা পদ্ধতি এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। সারা দুনিয়াব্যাপী আমাদের ডাক্তাররা যেভাবে চিকিৎসা করছেন সেটি একটি বিস্ময়কর ব্যাপার। তারা নিজেদের জীবন বাজি রেখে এই রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা করে যাচ্ছেন। তেমনিভাবে বৈজ্ঞানিকরাও বসে নেই তারা কাজ করছেন কীভাবে এটির প্রতিষেধক আবিষ্কার করা যায়।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশেও আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এই ভাইরাসকে মোকাবেলা করার জন্য সরকার এবং সরকারি দল আওয়ামী লীগ অবিরত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এজন্য প্রত্যেক জেলা ও উপজেলা কমিটিগুলো কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে এখনও বুঝা যাচ্ছে না অবস্থা কেমন হবে। কিন্তু আমরা এখনও ভালো আছি বলে ধারণা করলে এখানে শ্লাঘার কিছু নেই। তবে আমাদেরকে সাবধান ও সতর্ক হতে হবে। আমাদেরকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো মানতে হবে। বিশেষ করে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার জন্য যে কথাগুলো বলা হচ্ছে (স্টে হোম, স্টে সেফটি) যে স্লোগানটা অর্থাৎ ঘরে থাকলে ভালো থাকবেন। আপনি নিজেও ভালো থাকবেন অন্যদেরকেও ভালো রাখবেন। সেই ব্যাপারে সকলের সতর্ক হওয়া উচিত।
মত ও পথ সম্পাদক বলেন, আপনারা জানেন যে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। সেই সমস্ত জায়গা থেকে অনেকে আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও চলে এসেছে, যারা চলে এসেছেন তাদেরকে সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন কাজ করবে এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনরাও কাজ করবে।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, একই সাথে আমি বলব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানিয়েছেন এবং আমরাও বলেছি আমাদের যারা স্বজন আছে, আমাদের যারা পড়শী আছে, তাদের মধ্যে অনেকে দিন আনে দিন খায়। এই লোকগুলো এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাদের পাশে সমাজের বিত্তবান দাঁড়ানো উচিত।
তিনি বলেন, আমি একজন আলেম হিসেবে বলছি, এই সময়ে আপনি মানুষের সেবা করতে গিয়ে যদি যাকাতের টাকাও নিয়ে আসেন সেটাও সবচেয়ে বেশি এপ্রোপ্রিয়েট হবে। এই খরচের ব্যাপারে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য এটি খরচ করা যাবে। এটির জন্য কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন মানতে হবে না। মানুষের দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের ধর্মেরও শিক্ষা, মানবতারও শিক্ষা। মানুষ মানুষের জন্য এই কথাটাকে মেনে নিয়ে আমাদেরকে সামনে এগোতে হবে। আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনও মানুষের সেবায় কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তাঁর নির্দেশ পুরোপুরি মেনে চলব
মোকতাদির চৌধুরী আরও বলেন, আপনারা জানেন আজকে বরাতের রাত্রি। এই সময় আমরা এবাদত বন্দেগী একটু বেশি করে থাকি। কিন্তু এবাদত বন্দেগীটা হচ্ছে নফল। এটির জন্য আমরা মসজিদ বা অন্য কোথাও বড় ধরনের জমায়েত করে নিজেদেরকে এবং অন্যদেরকেও ক্ষতিগ্রস্ত করার ঝুঁকি যেন না নিই। আপনারা মসজিদে ভীড় না করে ঘরে বসে নামাজ আদায় করুন।
তিনি বলেন, আপনারা যত বেশি সোস্যাল ডিস্টেন্স মেইনটেইন করবেন তত বেশি করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে পারবেন। একই সাথে আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন সশস্ত্র বাহিনীর যারা সিভিল এইডে এসেছেন তারা এবং আমার দল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অন্যান্য যারা কাজ করছেন সকলকে আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, যে সমস্ত ডাক্তার বন্ধুরা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞতা জানাব।জাতির এই দুঃসময়ে তারা যে কাজ করছে তা অত্যন্ত মহত্ত্বের পরিচায়ক। আমি সকল ডাক্তার ও আমার দলের নেতাকর্মীদের অনুরোধ করব আপনারা মানুষের পাশে দাঁড়ান এবং ইনশাআল্লাহ আমাদের সম্মিলিত চেষ্টায় এটিকে মোকাবেলা করতে পারব।
তিনি বলেন, আপনারা সকলেই জানেন, আমি একটি বড় ধরনের অপারেশনের কারণে সরাসরি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উপস্থিত থেকে কাজ করতে পারছি না এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।কিন্তু আমি সবসময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষের পাশে আছি। বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা, শহর ও বিজয়নগরের মানুষের পাশে আছি, ইনশাআল্লাহ থাকব।