দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংক্রামক এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ২২ জন চিকিৎসকও। এছাড়া আইসোলেশনে রয়েছেন আরও ৮৭ জন চিকিৎসক।
চিকিৎসকদের নানা বিষয় নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘বাংলাদেশ ডক্টর ফাউন্ডেশন’ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি মিলে ২২ জন চিকিৎসকের করোনা পজেটিভ এসেছে। তাদের প্রত্যেকেই চিকিৎসাধীন। আরও ৮৭ জন চিকিৎসককে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের প্রো-ভিসি অধ্যাপক শহিদুল্লাহ শিদকারও রয়েছেন।
নভেল করোনাভাইরাসের মহামারী মোকাবেলায় যেসব চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছেন, তাদের পুরস্কৃত করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত মঙ্গলবার সকালে গণভবন থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে সরকারপ্রধানের এই ঘোষণা আসে।
মার্চের শেষের দিকে মিরপুরে ডেল্টা হাসপাতালে একজন করোনা রোগি মারা যাওয়ার পর সেখানকার একজন চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে। পরে চিকিৎসায় তিনি সেরেও উঠেছেন। এছাড়া সিলিটের ও কিশোরগঞ্জের দুজন চিকিৎসককে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে চিকিৎসার জন্য।
এর বাইরে চিকিৎসকদের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি তেমন প্রকাশ হয়নি। এদিকে চিকিৎসকদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি আইইডিসিআরের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার।
করোনার প্রকোপ শুরুর পর থেকেই নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিতের দাবি করে আসছিলেন চিকিৎসকরা। বিশেষ করে পিপিইসহ বেশ কিছু জিনিসের কথা বলা হলেও এ নিয়ে নানা কথাবার্তা হয়েছে। ধীরে ধীরে এটি দেয়া হলেও সব জায়গায় পর্যাপ্ত পিপিই পৌঁছে নি বলে অভিযোগ আছে চিকিৎসকদের।
এদিকে ২২জন সহকর্মীর করোনা পজিটিভ হওয়ার খবরে অনেক চিকিৎসকদের কপালে মধ্যে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। তবে এর মধ্যেও চিকিৎসকরা ঝুঁকি নিয়ে রোগি দেখছেন।
বাংলাদেশ ডক্টর ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, পপুলার হাসপাতালের এক ডাক্তার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন গত বৃহস্পতিবার। পরে তার সংস্পর্শে আসা পাঁচ চিকিৎসককে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
এদিকে করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ৯ জন সার্জারি ডাক্তার, ৬ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ১ জন ওয়ার্ডবয় হোম কোয়ারেন্টাইনে গেছেন। এছাড়াও আরো বেশ কিছু জায়গায় এমন ঘটনা ঘটছে।
ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টিবোর্ডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডা.কাউসার বলেন, সারা দেশে এখন পর্যন্ত ২২ জন ডাক্তারের করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ পপুলার হাসাপাতালের এক চিকিসৎকের করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে।
এদিকে বাংলাদেশ ডক্টর ফাউন্ডেশনের একজন শীর্ষ পর্যায়ের চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যদিও আইইডিসিআর থেকে কিছু বলা হচ্ছে না তারপরও আমাদের কাছে যেসব তথ্য তাতে ২২ জনের করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে সরকারি- ও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক আছেন। তারা এই সময়ে রোগি দেখেছেন, হাসপাতালে ডিউটি করেছেন। সেক্ষেত্রে সবারই তো টেস্ট করানো উচিত।
তিনি বলেন, ঢাকা, নারায়ণঞ্জে, সিলেট, কিশোরগঞ্জ আরো কিছু এলাকার চিকিৎসক আছেন আক্রান্তদের মধ্যে। কিশোরগঞ্জের এক চিকিৎসক বেসরকারি মেডিকেলে চাকুরী করলেও তার স্ত্রী সরকারি মেডিকেলের চিকিৎসক। তিনি এখনো ডিউটি করছেন। সামনে পরিস্থিতি কি হবে এটা নিয়ে সবাই টেনশনে আছি।
এদিকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের প্রো-ভিসি শহিদুল্লাহ শিকদার ছাড়াও ডি ব্লকে আরো দুইজন চিকিৎসকের করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। যে কারণে হাসপাতালটির চিকিৎসকরাও আতঙ্কে আছেন। গত কয়েকদিনে প্রো-ভিসি দাপ্তরিক নানা কাজ কর্মের পাশাপাশি টেলিভিশন টকশোতেও কথা বলেছেন; যে কারণে তার মাধ্যমে আরো অনেকে সংক্রমিত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।