বিশ্বের অন্য কোনো দেশে অত মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়নি যতটা হয়েছে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে। প্রকাশিত ছবির বরাতে ব্রিটিশ সংভাদমাধ্যম বিবিসি শুক্রবারের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নিউইয়র্ক শহরে যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন তাদের গণকবর দেওয়া হচ্ছে।
নিউইয়র্কে প্রতিদিন শত শত মানুষ করোনায় প্রাণ হারাচ্ছেন। বিরাট গণকবরে একসঙ্গে অনেক মানুষকে কবর দেয়া হচ্ছে, ড্রোন দিয়ে তোলা এমন ছবি ও ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোতে।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুখ থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত ঢাকা ‘হ্যাজমাট’ স্যুট পরা কর্মীদের কাজ করতে দেখা যাচ্ছে বিরাট এক গণকবরে। তারা মই দিয়ে সেই কবরে নামছে, একটার পর একটা কফিন সেখানে রাখছে।
- আইএমএফ’র কাছে ৫ হাজার ৯১১ কোটি টাকা জরুরি সহায়তা চায় বাংলাদেশ
- পিছিয়ে গেল করোনাভাইরাস শনাক্তে গণস্বাস্থ্যের কিট হস্তান্তর
এই কবরস্থানটি নিউইয়র্কের হার্ট আইল্যান্ডে অবস্থিত। সাধারণত যেসব মৃত ব্যক্তির কোন আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ পাওয়া যায় না বা যাদের শেষ কৃত্যানুষ্ঠানের খরচ দেয়ার সাধ্য নেই, তাদেরই এখানে কবর দেয়া হয়।
নিউইয়র্কের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি এখন ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাওয়া হিসাব অনুযায়ী, শুধু নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৫৯ হাজার ৯৩৭ জন। আক্রান্তদের সাত হাজারের বেশি রোগী মারা গেছে।
অন্যদিকে স্পেনে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৫৩। ইতালিতে তা ১ লাখ ৪৩ হাজার। পুরো যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৪ লাখ ৬২ হাজারের বেশি। প্রাণ হারিয়েছেন সাড়ে ১৬ হাজারের বেশি মানুষ।
ড্রোনে তোলা গণকবরের ছবি
নিউইয়র্কের হার্ট আইল্যান্ড গত দেড়শ বছর ধরেই গণকবরের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ড্রোনে তোলা ছবিতে যেসব কফিন দেখা যাচ্ছে, তার বেশিরভাগই করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া মানুষের, এমন সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।
করোনাভাইরাসের মহামারি শুরু হওয়ার পর এই জায়গায় গণকবর খোঁড়া হচ্ছে। আগে যেখানে সপ্তাহে একদিন হয়তো পরিচয়বিহীন কোনো মরেদহ সৎকার করা হতো। এখন সেখানে সপ্তাহে পাঁচদিন খনন কাজ চলছে।
সাধারণত রিকার্স আইল্যান্ডের কারবন্দিদের দিয়ে কবর খোঁড়ানো হয়। কিন্তু এখন যেহেতু অনেক বেশি কবর খুঁড়তে হচ্ছে, তাই এই কাজ দেয়া হয়েছে ঠিকাদারদের।
নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডে ব্ল্যাসিও ইঙ্গিত দিয়েছেন, সংকট না কাটা পর্যন্ত অনেককে হয়তো ‘অস্থায়ী কবরে’ সমাহিত করতে হতে পারে। তিনি বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে আমরা হার্ট আইল্যান্ডকেই এই কাজে ব্যবহার করেছি।’
নিউইয়র্কে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭৯৯ জন করোনাভাইরাসে মারা গেছে। টানা তৃতীয় দিনের মতো সেখানে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হলো। তবে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গভর্নর এন্ড্রু কুমো আশাবাদী যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
কারণ দ্বিতীয় দিনের মতো হাসপাতালে নতুন করে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা কমেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। গভর্নর কুমো বলেছেন, মানুষজন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখায় হয়তো পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। নিউইয়র্কে করোনা মহামারির ভয়াবহতাকে নাইন-ইলেভেনের ভয়াবহতার সঙ্গে তুলনা করেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের করোনাভাইরাস টাস্কফোর্সের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ডা. ফউসি মার্কিন টেলিভিশন এনবিসিতে সাক্ষাৎকারে বলেন, কোভিড-নাইনটিনে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর সংখ্যা ৬০ হাজারের মতো দাঁড়াবে বলে মনে করছেন তারা। গত মার্চে অবশ্য এক থেকে দুই লাখ মানুষ মারা যেতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানায় হোয়াইট হাউস।