সরকারের অবহেলায় স্বাস্থ্যখাতে চরম সংকট চলছে এমন দাবি করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, কয়েক মাস হাতে সময় পেলেও সেই সময়ে সরকার করোনা প্রতিরোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ও অন্যদের জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) প্রদান করেছে জেডআরএফ ও ড্যাব। সে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে রিজভী এসব কথা বলেন।
বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকট থেকে বাংলাদেশের মানুষ যাতে দ্রুত বেরিয়ে আসতে পারে সে জন্য নানামুখি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ) ও ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। এ লক্ষ্যে বর্ধিত আকারে কর্মতৎপরতা শুরু করেছে উভয় সংগঠন। এরই ধারাবাহিকতায় এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট তারেক রহমানের পরামর্শে এই কার্যক্রমে নানাভাবে সম্পৃক্ত থেকে সহযোগিতা করছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এবং বেসরকারি মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ শাখা ছাত্রদল।
রিজভী জেডআরএফ এবং ড্যাবের এই কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘সমস্ত দেশবাসী এখন বৈশ্বিক মহামারি করোনার ভয়ে ভীত এবং মারাত্মক সংকটের মধ্যে রয়েছে। পরীক্ষিতদের মধ্যে করোনা রোগী শনাক্তকরণের হার প্রতিদিনই আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। ঢাকাসহ সারাদেশর ২০ জেলায় এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের থাবা লক্ষ্য করা গেছে। এই সংকট মোকাবিলায় আমাদের জাতীয় ঐক্য দরকার।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার) দেশের ১০টি জেলায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন কমপক্ষে ১৫ জন। এমন হিসাব প্রায় প্রতিদিনের। সত্যিকারার্থে জনস্বাস্থ্য নিয়ে এ সরকার কিছুই করেনি। সরকারের মন্ত্রীদের মুখে দেশে উন্নয়নের জোয়ারের খবরে এতদিন দেশ ভেসে গেছে! তাহলে স্বাস্থ্য খাতের এত বেহাল দশা কেন?’
রিজভী বলেন, ‘হাসপাতালে নেই কোনো আধুনিক সরঞ্জামাদি। পরীক্ষা করতে নেই সামগ্রী, রোগ ডায়ালাইসিসের কোনো ব্যবস্থা নেই, তেমন কোনো আইসিউ নেই, ১৭ কোটি মানুষের জন্য ভেন্টিলেটর আছে মাত্র ১৭শ। হাসপাতালে চিকিৎসক নেই, নার্স নেই। হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছে ঢাবি শিক্ষার্থীসহ অসংখ্য মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের বর্তমানে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘যখন থেকে করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব শুরু হয়েছে সরকার তখন থেকেই কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলেই মেডিকেল সেক্টরে করোনাভাইরাস প্রতিরোধর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। সরকারের অবহেলার কারণেই স্বাস্থ্যখাতে চরম সংকট বিরাজ করছে। এই সংকটের মধ্যেও অনেক চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী নিবেদিতভাবে কাজ করছেন। তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। যার যার অবস্থানে থেকে সবাইকে সচেতনভাবে কাজ করতে হবে।’
‘আমাদের এই দরিদ্র দেশে এই মুহুর্তে দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল কোটি কোটি মানুষ এখন কর্মহীন। চাল-ডাল যোগাড় করতে তারা যদি সামাজিক দূরত্বের দেয়াল ভেঙে বেরিয়ে আসেন সংক্রমণ প্রতিরোধ তখন অসম্ভব হয়ে পড়বে। কারণ ক্ষুধার আক্রমণ করোনার চেয়েও ভয়ংকর। তাই রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ওইসকল জনগোষ্ঠীর জন্য আপদকালীন সহযোগিতাই পারে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই বিএনপি বেশকিছু প্রস্তাবনা জাতির সামনে পেশ করেছে।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন- ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুস সালাম, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) আহমেদ শফিকুল হায়দার পারভেজ, শায়রুল কবির খান ছাড়াও হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের ডেপুটি পরিচালক ডা. এনামুলসহ চিকিৎসক, নার্সরা।