বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মারাত্মক আকার ধারণ করছে বাংলাদেশেও। এই অবস্থায় চলছে টানা সাধারণ ছুটি। এই ছুটিতে সরকারি-বেসরকারি সবধরনের অফিস-আদালত বন্ধ থাকলেও সীমিত আকারে খোলা রয়েছে ব্যাংক। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা। তারা ব্যাংকারদের পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি সপ্তাহে দুদিন অঞ্চলভিত্তিক ব্যাংকের শাখা খোলা রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন।
বর্তমানে ব্যাংকের ক্লিয়ারিং হাউজ, বৈদেশিক লেনদেন, সঞ্চয়পত্র, বেতন, পেনশন, বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাসহ সবধরনের সেবা চালু রয়েছে। প্রতিদিনই ব্যাংকে গ্রাহকদের চাপও বাড়ছে। ইতিমধ্যে কয়েকজন ব্যাংক কর্মী করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় উদ্বিগ্ন ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা।
এই অবস্থায় ব্যাংকে গ্রাহকদের নিয়ন্ত্রণে শাখা পর্যায়ে পুলিশের সহযোগিতা এবং সপ্তাহে ২ দিন অঞ্চলভিত্তিক ব্যাংক শাখা খোলা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এতে প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং সেবা পুরোপুরিই দেয়া যাবে বলে মনে করেন ব্যাংকাররা।
রোববার সিটি ব্যাংক কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান, সোনালী ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পলাশ মন্ডলসহ নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক বেশ কয়েকজন ব্যাংকারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাদের এসব পরামর্শের কথা।
ব্যাংকাররা জানান, দেশের অর্থনীতির কথা ভেবে সীমিত আকারে ব্যাংক খোলা রাখার যৌক্তিকতা রয়েছে। তবে গ্রাহকদের কারণে-অকারণে শাখায় ভিড় নিয়ন্ত্রণ জরুরি। না হলে ব্যাংকই হতে পারে করোনা ছড়ানোর উৎস।
কর্মকর্তারা জানান, অধিকাংশ ব্যাংকের শাখায় একজন গানম্যান এবং তিন বা চারজন সিকিউরিটি গার্ড থাকেন। তাদের পক্ষে এত গ্রাহকের চাপ সামলানো কষ্টকর। দেশের বিভিন্ন শাখায় বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকের শাখায় উপচেপড়া ভিড়। কারণ সরকারি ব্যাংকের এটিএম বুথ ব্যাংকিং সেবা খুবই কম। নেই বললেই চলে। কোনো গ্রাহকের পাঁচশ টাকা তোলার দরকার হলেও তারা ব্যাংকে এসে ভিড় করছেন। এমনকি দুই একজনকে সঙ্গে করেও নিয়ে আসছেন কেউ কেউ। গ্রাহক সামলাতে শাখার নিজ উদ্যোগে পুলিশ ডাকতে হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বিত কোনো উদ্যোগ নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সংকটময় পরিস্থিতিতে প্রত্যেক শাখায় ন্যূনতম দুজন পুলিশের ব্যবস্থা করতে পারে বলে মত দেন ব্যাংকাররা।
ব্যাংকাররা প্রতিদিনই সব ব্যাংকের শাখা খোলা না রেখে অঞ্চলভিত্তিক ব্যাংকের শাখা সপ্তাহে দুদিন খোলা রাখার দাবি জানান। এছাড়া তাদের জীবনের ঝুঁকি কমাতে লকডাউন এলাকায় ব্যাংক বন্ধ রাখার পরামর্শ ব্যাংকারদের।
তারা আরও জানান, সরকারি ব্যাংকে বিভিন্ন ভাতা এবং বেতনাদি পরিশোধে ভিড় সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো সার্কুলারে ব্যাংক ১টা পর্যন্ত, কোনো সার্কুলারে সাড়ে ১২টা, আবার কোনো সার্কুলারে ১২টা পর্যন্ত লেনদেনের সময়সীমা দেয়ায় গ্রাহকরা পড়েছেন হয়রানিতে।
ব্যাংকাররা জানান, ব্যাংক চার ঘণ্টা খোলা হোক আর আট ঘণ্টা, গ্রাহকদের নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ঝুঁকি বাড়বে। তাছাড়া ক্যাশ কর্মকর্তারা বেশি ঝুঁকিতে। তারা ব্যক্তি বা অফিসের সহায়তায় পিপিই পরলেও প্রধানমন্ত্রীর একটি ঘোষণায় তারা এটি ব্যবহারে ভয় পাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, ডাক্তার ছাড়া কেউ পিপিই ব্যবহার করবেন না।
আরও পড়ুন >> যুক্তরাজ্যে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়াল
তারা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের কষ্ট দেখার জন্য বা ব্যাংকগুলো সঠিকভাবে করোনা সংকটকালীন সময়ে সঠিকভাবে নির্দেশনা মানছে কি না তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেখছে না। শুধু সার্কুলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। করোনা মোকাবেলায় কোনো কমিটিও নেই।
জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, করোনার জন্য ব্যাংকের আলাদা কমিটির দরকার নেই। আমরা ব্যাংকারদের সুরক্ষায় সব ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছি। এবং ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। তাদের সুবিধা অসুবিধার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিচ্ছি।