করোনাভাইরাসে কৃষি খাতের ক্ষতি মোকাবিলায় কৃষকের জন্য ৫০০০ কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ তহবিল থেকে সহজ শর্তে মাত্র ৫ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে পারবেন কৃষক।
রোববার (১২ এপ্রিল) ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্যকালে এ প্রণোদনা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন বরিশাল ও খুলনা বিভাগের জেলাসমূহের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
কৃষককে বিশেষ প্রণোদনা দেয়া হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষিখাতে চলতি মূলধন সরবরাহে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকা নতুন একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করবে। এখান থেকে শুধু কৃষিখাতে গ্রাহক পর্যায়ে সর্বোচ্চ সুদহার হবে ৫ শতাংশ।
তিনি বলেন, আরেকটি উদ্যোগ নিয়েছি সেটা চলমান রয়েছে। সেটা হলো কেউ পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ মসলা জাতীয় কিছু উৎপাদন করলে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হয়। এটা আমরা আগেই চালু করেছি এটা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি আমরা যে নতুন স্কিমটা নিচ্ছি ৫০০০ কোটি টাকার একটা প্রণোদনা। এখান থেকে আমরা মাত্র ৫ শতাংশ সুদে কৃষকদের ঋণ বরাদ্দ দেব। এই তহবিল থেকে গ্রাম অঞ্চলে যারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষী; তাদের জন্য ঋণ দেওয়া হবে। কৃষি, ফুল, ফল, মৎস্য, পোল্ট্রি, ডেইরি ফার্ম ইত্যাদি সকল কর্মকাণ্ডে এখান থেকে সহায়তা পাবেন।
তিনি বলেন, কোনো মানুষ যেন কষ্ট না পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করছি। কৃষি মানে গ্রাম অঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষী উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের ক্ষতি মোকাবিলায় আমরা বেশ কিছু প্রণোদনা দিয়েছি। শিল্প-কৃষি সব ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের অনেক উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু এখন সবচেয়ে বড় কথা মানুষ বাঁচানো। মানুষের জীবনযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া। সেই জন্য আমাদের দেশের কৃষক শ্রমিক দিনমজুর থেকে শুরু করে কামার-কুমার তাঁতি জেলে সবার জন্য সাহায্য করতে আমরা প্রস্তুত।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে শিল্প খাতের জন্য ৭২ হাজার কোটি টাকা বেশি কয়েকটা প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে আমরা বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি নিয়েছি। কিছুদিনের মধ্যে বড় ফসল উঠবে। কৃষক যেন সঠিক মূল্য পায় বিষয়টি লক্ষ্য রেখে খাদ্য মন্ত্রণালয় গত বছরের তুলনায় বেশি ধান চাল ক্রয় করবে কিনবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধান কাটা ও মাড়াই যান্ত্রিক করণের জন্য ইতোমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়কে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আরও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে। এছাড়া বীজ, চারা রোপণের জন্য আরো দেড়শ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে। পাশাপাশি সারের ভর্তুকি হিসেবে আগামী অর্থবছরে ৯ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হবে। যাতে করে কৃষকের উৎপাদন ব্যাহত না হয়।
করোনাভাইরাসের প্রকোপে বিশ্বব্যাপী মারাত্মক খাদ্য সংকট দেখা দেবে আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি নিজেরা উৎপাদন ঠিক রাখি তাহলে এই সঙ্কট মোকাবিলা করতে পারব। এজন্য আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে; যাতে আমার দেশের মানুষ কষ্ট না পায়। পাশাপাশি আমরা অনেক দেশকে সহযোগিতা করতে পারি, রফতানি করতে পারি সেই বিষয়টা মাথায় রেখে উৎপাদন বাড়াবেন বলেন শেখ হাসিনা।
কারও এতোটুকু জমিও যেন অনাবাদি না থাকে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একখণ্ড জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। আপনারা ছাদে টবের মধ্যেও গাছ লাগান। যেটাই উৎপাদন করবেন সেটাই কাজে লাগবে।