করোনা সংকট: জাতীয় ঐকমত্য ও দুর্যোগ কমিটি চান রাজনীতিকরা

করোনা সংকট মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্য চান বিরোধী রাজনীতিকরা

মহামারী করোনাভাইরাসে উদ্ভূত সংকট মোকাবেলায় জাতীয় ঐকমত্য চান রাজনীতিবিদরা। একইসঙ্গে এই সংকট মোকাবেলায় এখনই জাতীয় দুর্যোগ কমিটি গঠন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। দলমতের উর্ধ্বে উঠে করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে সামনে সংকট আরো কঠিন হবে বলেও আশঙ্কা তাদের।

সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট কর্তৃক আয়োজিত ‘সর্বদলীয় পরামর্শক সভায়’ বিভিন্ন দলের রাজনীতিকরা এসব কথা বলেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ছাড়া বিএনপি, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, জাসদ (রব) ও সিপিবিসহ বাম ঘরানার বিভিন্ন দলের নেতারা অংশ নেন। স্কাইপের মাধ্যমে যোগ দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

দলীয়করণের ঊর্ধ্বে উঠতে না পারলে করোনাভাইরাস মোকাবিলা সম্ভব নয় মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সামনে আরও ভয়াবহ দিন আসছে। আপনারা সবাই একমত হবেন যে- সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশপ্রেমকে সামনে রেখে সততাকে সামনে রেখে যদি হ্যান্ডেল করা না যায় তাহলে আরও বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়বো। অনেকে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কাও করছেন।’

করোনাভাইরাসের ভয়াবহতাকে সরকার দুর্ভাগ্যজনকভাবে গুরুত্ব দেয়নি অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে- তা একেবারেই অপ্রতুল। জানতে পেরেছি ৪০ হাজার লোকের মধ্যে মাত্র ৩শ লোককে দেওয়া হয়েছে ত্রাণ। আবার সেখানেও দলীয়করণ করা হয়েছে।’

জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে সমন্বিত পরিকল্পনা করে বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই মহাদুর্যোগ মোকাবিলা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। একইসঙ্গে এই প্রস্তাব সরকার কেন তাদের প্রস্তাব অবহেলা করছে তা বুঝতে পারছেন না বলেও তিনি জানান।

এ সময় করোনাভাইরাস প্রতিরোধের মধ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার পাশাপাশি ৮৭ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্রদানের প্রস্তাবনাসমূহ তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

সভার সূচনা বক্তব্যে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ করোনা সংক্রমণকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে তা মোকাবিলায় সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানা।

গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আপনাদের বক্তব্য আমি সমর্থন করি। জাতীয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আমাদের এই করোনা ভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলা করতে হবে। এককভাবে এটা সম্ভব না।’

জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে জাতীয় দুর্যোগ কমিটি গঠন করতে হবে। সব শ্রেণির মানুষকে নিয়ে, ১৬ কোটি মানুষকে নিয়ে, সব পেশার মানুষকে নিয়ে এই কমিটি করতে হবে।’

‘সরকারের একার পক্ষে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি না। আমি অনুরোধ করবো সরকারসহ সব মহলকে, আসুন আমরা জাতিগতভাবে একত্রিত হই এবং জাতীয় এই মহাদুর্যোগ মোকাবিলা করি।’

সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘এই মহাদুর্যোগে একা নয়, ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস দরকার। এটা করতে হবে। আমি এখনো আহবান জানাবো সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করার। একাত্তরে আমরা যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, করোনা ভাইরাসের এই ক্রান্তিকাল মোকাবিলায়ও আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজের সঞ্চালনায় এই পরামর্শ সভায় সিপিবির আবদুল্লাহ কাফী রতন, রুহিন হোসেন প্রিন্স, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির আকবর খান, বাসদের রাজেকুজ্জামান রতন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাসদের খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের প্রধান টিপু বিশ্বাস, গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, বাম ঐক্যজোটের আহবায়ক নাসির উদ্দিন আহমেদ নাসু, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মোশরেফা মিশু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহবায়ক হামিদুল হক, ওয়ার্কার্স পার্টির (মাকর্সবাদী) সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, গণসংহতি আন্দোলন প্রধান জোনায়েদ সাকি, ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সভাপাতি এম এ সবুর প্রমুখ স্কাইপের মাধ্যমে অংশ নেন।

এছাড়াও সর্বদলীয় এই পরামর্শক সভায় সরকারি দল আওয়ামী লীগ ছাড়া বিএনপি, সিপিবি, গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, কল্যাণ পার্টিসহ বিভিন্ন বাম সংগঠনের শীর্ষ নেতারা স্কাইপের মাধ্যমে অংশ নেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে