মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করছে বাংলাদেশেও। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় করোনা রোগী ছড়িয়ে পড়লেও কয়েকটি এলাকায় এর বিস্তার ঘটছে আশঙ্কাজনকভাবে। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ আগে থেকেই বেশি ঝুঁকিতে ছিল। নতুন করে এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও কেরানীগঞ্জ। এসব এলাকায় লকডাউন কঠোর না করলে পরিস্থিতি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
করোনা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বুধবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান এসব তথ্য।
ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত নতুন আরও ২১৯ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে; মোট আক্রান্ত এখন পর্যন্ত এক হাজার ২৩১ জন৷ গত ২৪ ঘণ্টায় এক চিকিৎসকসহ মারা গেছেন চারজন। সর্বমোট মারা গেছেন ৫০ জন৷ আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় সাতজন সংক্রমণমুক্ত হয়েছেন৷ এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৪৯ জন৷
এদিকে মাদারীপুরের শিবচর, ঢাকার মিরপুর ও বাসাবো এবং নারায়ণগঞ্জ জেলাকে আগেই করোনা ভাইরাসের ‘ক্লাস্টার’ ঘোষণা করে আইইডিসিআর৷ ক্লাস্টার অর্থ যেখানে অল্প দূরত্বে অধিক আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে৷ দেশে এখন সামাজিক সংক্রমণ হচ্ছে৷ বাড়ছে ক্লাস্টারের সংখ্যাও৷ নতুন করে গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও কেরানীগঞ্জে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ওইসব এলাকায় কঠোর লকডাউন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী৷
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কথা মাথায় রেখে বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে ২০০০ শয্যা আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই প্রস্তুত হয়ে যাবে। এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনেও ১৩০০ শয্যা প্রস্তুতের কাজ চলছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, সবেচয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ঢাকায়। সেখানে মোট ৫৭ জন কোভিড-১৯ এর রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এর পরেই আছে নারায়ণগঞ্জ। আর দিনাজপুরে সাতজনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। যারা সবাই ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে দিনাজপুরে গেছে। তিনি বলেন, নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার সংখ্যা আগামী কয়েক দিনে আরো বাড়ানো হবে। আর এর ফলে পুরো বাংলাদেশের চিত্র পাওয়া যাবে।
দেশ গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়৷ তারপর টানা ছয়দিন কোনো নতুন রোগী পাওয়া যায়নি৷ এর মূল কারণ ছিল পরীক্ষার অপর্যাপ্ততা৷ এরপর পরীক্ষার আওতা যত বাড়তে থাকে শনাক্তও তত বাড়তে থাকে৷ তবে এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে নতুন সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে এবং প্রায় প্রতিদিনই নতুন আক্রান্তের রেকর্ড হচ্ছে৷ এর কারণও টেস্টের আওতা ও পরিমাণ বৃদ্ধি৷
আইইডিসিআর এর তথ্য অনুযায়ী ১৫ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত ১৪ হাজার ৮৬৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে৷ তারমধ্যে আইইডিসিআর এ চার হাজার ৪১২টি এবং অন্যান্য ল্যাবে ১০ হাজার ৪৫৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়৷ এই দুটো সংখ্যাই নতুন রোগী শনাক্ত বাড়ার কারণ স্পষ্ট করে দিচ্ছে৷ শুরুতে দেশে শুধু আইইডিসিআর এ করোনা ভাইরাস টেস্ট করা যেত৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রথম থেকেই বলে আসছে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার পরীক্ষা৷ যত বেশি পরীক্ষা করা যাবে তত রোগী শনাক্ত হবে এবং তাদের আলাদা রাখার মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণ কমিয়ে আনা যাবে৷ করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সফল দেশগুলোর অন্যতম দক্ষিণ কোরিয়া এই কৌশল অবলম্বন করে পুরো দেশ লকডাউন করা ছাড়াই কোভিড-১৯ মহামারিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে