আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা সতর্ক করে বলেছেন, করোনার প্রভাবে উদীয়মান বাজার এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে, শত শত বিলিয়ন ডলার বিদেশি সহায়তার প্রয়োজন হবে। মাত্র তিন মাস আগে ২০২০ সালে আমাদের সদস্য ১৬০টি দেশের মাথাপিছু আয়ে প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা করেছিলাম। এখন এই পরিসংখ্যান একদম ঘুরে গেছে। আমরা আশঙ্কা করছি ১৭০টি দেশে মাথাপিছু আয়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হবে। বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
জর্জিয়েভা বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি চলতি বছরের প্রথমার্ধেই ‘ভয়ানক মন্দার’ মুখোমুখি। সামনে তা কোন পথে পা রাখবে, তা নির্ভর করছে করোনা মোকাবেলায় দেশগুলোর দক্ষতার ওপর। বিরূপ প্রভাব বেশি পড়বে আর্থিকভাবে দুর্বল দেশগুলোর অর্থনীতিতে।
আইএমএফ প্রধান জানান, বাণিজ্য যুদ্ধসহ নানা কারণে বিশ্ব অর্থনীতি প্রত্যাশিত গতিতে এগোতে পারছিল না। করোনা তাকে আরও এলোমেলো করেছে। যেসব দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দুর্বল এবং আর্থিক অবস্থাও ভালো নয়, তাদের নীতিনির্ধারকেরা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে চলেছেন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার ফল ইতোমধ্যেই ভুগছে এই দেশগুলো। তার ওপর রয়েছে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়া, অন্য দেশ থেকে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের সরবরাহ ধাক্কা খাওয়ার মতো সমস্যাও।
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা সতর্ক করে বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে চলতি বছর বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ‘তীব্র নেতিবাচক’ হবে। ১৯৩০ সালের মহামন্দার পর বিশ্ব সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। ২০২১ সাল নাগাদ আংশিক পুনরুদ্ধার হবে বলে পূর্বাভাস দেন তিনি। যদি এই বছরের মাঝামাঝি এসে এই মহামারীর প্রকোপ কমে তাহলে আগামী বছর আংশিক পুনরুদ্ধার হতে পারে বলে আশা করা যায়। তবে তিনি সতর্ক করেছেন পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
তিনি বলেন, আমি জোর দিয়ে বলছি কী হবে তা নিয়ে প্রচণ্ড অনিশ্চয়তা আছে। কত দিন এই মহামারী থাকবেসহ বেশ কিছুর ওপর নির্ভর করে পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ হতে পারে।
আইএমএফ কর্ণধার বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় দেশে দেশে জারি হয়েছে লকডাউন। এতে অনেক প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। অনেকে ছাঁটাই করছেন কর্মীদের।
আরও পড়ুন >> ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর কাছে ক্ষমা চাইলেন জ.ই. মামুন
আইএমএফের তথ্য বলছে, করোনার মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশের সরকার ও শীর্ষ ব্যাংকগুলো মোট ১৪ লাখ কোটি ডলার খরচ করেছে। আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকও তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ করছে। এই তহবিল শক্তিশালী করতে উন্নত দেশগুলোর কাছে আবেদন জানিয়েছে তারা।
এ বছর বিশ্ব অর্থনীতি যে সঙ্কোচনেরমুখ দেখবে, সে ব্যাপারে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকসহ সব সংস্থাই নিশ্চিত। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালির মতো যে সব দেশে প্রথম করোনার ধাক্কা লেগেছিল, তাদের কলকারখানার উৎপাদন ইতোমধ্যেই কমেছে।