করোনা : মার্চে রপ্তানি কমেছে ৫ হাজার কোটি টাকা

বিশেষ প্রতিবেদক

আমদানি-রপ্তানি
ফাইল ছবি

করোনা ভাইরাসের প্রভাবে গত মার্চে বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে প্রায় ৬১ কোটি মার্কিন ডলারের যা স্থানীয় মুদ্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চলতি এপ্রিলে রপ্তানি পরিস্থিতি আরো বেশি খারাপ। বাংলাদেশের রপ্তানির ৮৪ শতাংশ আসে গার্মেন্টস পণ্য থেকে। করোনার ধাক্কায় ইতিমধ্যে এ খাতের রপ্তানি আদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়েছে প্রায় ৩২০ কোটি ডলার বা প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা।

universel cardiac hospital

অন্যদিকে আগামী মাসগুলোতে তেমন কোনো রপ্তানি আদেশও নেই। ফলে সার্বিকভাবে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশের রপ্তানি।

করোনা ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী খাবারসহ নিত্যপণ্যের বাইরে বাকি পণ্য ও সেবার ভোগব্যয় কমেছে অস্বাভাবিক হারে।

বাংলাদেশের বড়ো রপ্তানি বাজার ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনার ধাক্কায় রীতিমতো লণ্ডভণ্ড অবস্থা। সেখানে কার্যত অবরুদ্ধ পরিস্থিতিতে গার্মেন্টসসহ বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে আছে। ফলে গার্মেন্টস পণ্যনির্ভর বাংলাদেশের রপ্তানিতে বড়ো ধাক্কা লেগেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, সর্বশেষ মার্চ মাসে বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮ দশমিক ২৮ শতাংশ।

তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইর সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধান রপ্তানি বাজারে ক্রয়াদেশ দেওয়া পণ্যের পাশাপাশি শিপমেন্টের (জাহাজীকরণ) জন্য অপেক্ষায় থাকা পণ্যও নিচ্ছে না ক্রেতারা। আর আগামী মাসগুলোর জন্য নতুন করে ক্রয়াদেশ তো নেই-ই। এ পরিস্থিতি কবে নাগাদ ঠিক হবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফলে কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে রপ্তানিকারকদের। কেননা এর মধ্যে শ্রমিকের বেতনসহ অন্যান্য পাওনা পরিশোধ করতে হবে।

রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, যেসব কারখানার কাছে কিছু রপ্তানি আদেশ রয়েছে, করোনা ভাইরাসের কারণে তারাও কাজ করতে পারছে না। ফলে যা হাতে আছে, তাও চীনসহ অন্য দেশে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আগামীতে অনেক কারখানাই ব্যবসায়ে টিকে থাকতে পারবে না।

ইপিবির হিসাব অনুযায়ী, গত মার্চে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ২৭৩ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ পণ্য। আগের অর্থবছরের মার্চে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৩৪ কোটি ডলারের সমপরিমাণ। রপ্তানি কমেছে প্রায় ৬১ কোটি ডলার।

গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৪ হাজার ৫৪ কোটি ডলারের পণ্য। চলতি বছর এ লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয় ৪ হাজার ৫৫০ কোটি ডলারের। আর অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস জুলাই থেকে মার্চ পযন্ত ৩ হাজার ৩৮৯ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৮৯৭ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের পণ্য, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সোয়া ৬ শতাংশ কম।

বাংলাদেশ ৩১টি খাতের আওতায় দুই শতাধিক পণ্য রপ্তানি করে। ইপিবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এর মধ্যে হাতেগোনা দুই- একটি বাদে বাকি পণ্যের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। একই সঙ্গে গত ৯ মাসে বেশির ভাগ পণ্যের রপ্তানিই গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে।

গার্মেন্টস ছাড়াও রপ্তানি কমার তালিকায় থাকা বড়ো খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে হিমায়িত খাদ্য ও মাছ, কৃষিজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কাঠ ও কাঠজাতীয় পণ্য, বিশেষায়িত টেক্সটাইল, হোম টেক্সটাইল। অবশ্য একই সময়ে রপ্তানি বেড়েছে পাট ও পাট জাতীয় পণ্যের।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে