মাওলনা যুবায়ের আহমেদ আনসারি রজানাজাকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাকে নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করে নেটিজেনদের কাছে বহুল সমালোচিত হয়েছেন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলার বার্তা প্রধান জ ই মামুন। ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে গালি দেওয়ায় তাকে প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক( গ্রেড-১) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালযের ট্রেজারার প্রফেসর ফাহিমা খাতুন। এছাড়াও আজ রোবার তার কাছে লিগ্যাল নোটিশও পাঠানো হয়। নেটিজেনদের প্রতিবাদের মুখে আজ তার ফেসবুক আইডি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর কাছে তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে জ. ই. মামুনের দেওয়া ফেসবুক পোস্টটি মত ও পথ পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
করোনা ভাইরাস নিয়ে দেশের এই ঘোর বিপদের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গতকাল একজন ইসলামি চিন্তাবিদের জানাজাকে কেন্দ্র করে যে বিপুল জনসমাগম ঘটেছে তা আমার মতো প্রতিটি সচেতন নাগরিককে উদ্বিগ্ন করেছে। বিষয়টি জানা এবং ভিডিওসহ ছবি দেখার পর আমি প্রকৃতই ঘটনার আকস্মিকতায় এতটা ক্ষুব্ধ এবং হতাশ হয়ে পড়েছিলাম যে কি বলবো ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তাই রাগে দুঃখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শব্দটিকেই একটি গালি হিসেবে মন্তব্য করেছিলাম। কিন্তু আমার ভেতরে ওই জেলার প্রতি কোনো বিদ্বেষ নেই বা সেখানকার একজন মানুষের সঙ্গেও কোনো ঝগড়া বিবাদ নেই। বরং দু’বছর আগেও সেখানকার পুলিশ সুপারের আমন্ত্রণে ওখানে প্রতিবন্ধী ভাই বোনদের এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এসেছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অদ্বিতীয় ছানামুখী অনেকের মতো আমারও ভীষণ প্রিয়। আমি জানি ব্রাহ্মণবাড়িয়া ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সাহেব থেকে শুরু করে বহু কৃতি মানুষের জন্মস্থান। আমার সাংবাদিকতা জীবনের খুব শুরুতে, সম্ভবত ৯৩/৯৪ সালে হবে, এক কিশোরী ধর্ষণের রিপোর্ট করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া গিয়েছিলাম। সেই সময় স্বপ্নাহার ধর্ষণ মামলা বাংলাদেশে অন্যতম আলোচিত ঘটনা। তারপর থেকে বহুবার বহু উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া গিয়েছি, সেখানকার মানুষের উষ্ণ আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছি।
কিন্তু পাশাপাশি এটিও সত্যি যে সেই প্রগতিশীল আধুনিক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি অন্ধকার পিঠও আছে। ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ, কূপমন্ডুকতা এবং হিংসা বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলের মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়াকেও গ্রাস করেছে। যার প্রমান দেশের মানুষ গতকাল দেখেছে, আমিও দেখছি।
বস্তত আমার কোনো অঞ্চল বিদ্বেষ যেমন নেই, তেমনি অঞ্চল প্রীতিও নেই। আমি বাংলাদেশের সন্তান কিন্তু বিশ্ব নাগরিক হিসেবে নিজেকে চিন্তা করি। কালকের ঘটনার বীভৎসতা আমাকে ওই স্যাটায়ার বা প্রহসন করতে উৎসাহিত করেছে। একদিন পরে এসে দেখি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অনেকে এটাকে ব্যক্তিগতভাবে নিয়ে আমাকে এবং আমার পরিবারকে পর্যন্ত কুৎসিত এবং অশ্লীলতম ভাষায় আক্রমন করেছেন, কেউ কেউ আমাকে হত্যা করতে চেয়েছেন এবং অনেকে আহত করার হুমকিও দিয়েছেন।
সব মিলিয়ে ব্যাপারটা আমার কাছে চরম অস্বস্তির পর্যায়ে চলে গেছে। আমার বোঝা উচিত ছিলো, সমস্যাটা কোনো বিশেষ এলাকার নয়, গোটা জাতির। সেজন্যেই কবিগুরু শতবর্ষ আগে বলে গেছেন- “রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করোনি।” ব্রাহ্মণবাড়িয়া তাই তার বাংলাদেশের বাইরে নয়। আমরা সবকিছু ব্যক্তিগতভাবে নিতে পছন্দ করি, আমরা নিজের দেশ বলতে শুধু জেলা বা উপজেলাকে বুঝি, আমরা নিজের এলাকাকে, নিজের সন্তানকে, নিজের ধর্মকে, নিজের বুদ্ধিকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞান করি। আমরা রসিকতার জবাবে অশ্লীলতা, গালাগাল বুঝি। এগুলো আমার জানা। তবু নিজের নির্বুদ্ধিতার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া মানুষদের কাছে ক্ষমা চেয়ে আমার বক্তব্য প্রত্যাহার করলাম।
সবার মঙ্গল হোক।