সুর সম্রাট ওস্তাদ আল্লাউদ্দিন খাঁ, ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত,অদ্বৈত মল্ল বর্মণ , ব্যারিস্টার আব্দুল রসুল, স্যার সৈয়দ শামসুল হুদাসহ অসংখ্য কৃতিসন্তানের জন্মভূমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাড়ি হওয়ায় নিজেকে ধন্য মনে বলে করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (গ্রেড-১) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ফাহিমা খাতুন।
আজ রোববার তিনি তাঁর ফেসবুকে একটি পোস্টের মাধ্যমে এই কথা জানান। মত ও পথের পাঠকদের জন্য তাঁর পোস্টি হুবহু তুলে ধরা হলো-
ওস্তাদ আল্লাউদ্দিন খাঁ, ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত,অদ্বৈত মল্ল বর্মণ , ব্যারিস্টার আব্দুল রসুলের ব্রাহ্মণবাড়িয়া আমার বাড়ি বলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি, গর্ববোধ করি। যদিও আমার জন্ম ,বড় হয়ে ওঠা , পড়াশোনা, কর্মজীবন সবই ঢাকায় কিন্তু এ আমার নিজ জেলা । যে মনিষীদের নামগুলো শুরুতেই উল্লেখ করলাম তাঁরা একটি অসাম্প্রদায়িক, মুক্তচিন্তার ও প্রগতিশীল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বীজ বপণ করেছেন তাঁদের কর্ম দিয়ে । তাই একসময় শিক্ষায়, চাকুরী ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এগিয়ে ছিল অনেক বেশি।কিন্তু পচাঁত্তুরের পট পরিবর্তনের পর সারাদেশের মত ব্রাহ্মণবাড়িয়াও উল্টোপথের যাত্রী হয়েছে । এখানকার শিক্ষিত গোষ্ঠী বড় বড় আমলা হয়ে গ্রামকে ভুলে রাজধানীর চাকচিক্যকে বেছে নিয়েছেন। আর অনাদর অবহেলায় মফস্বল শহরটি সহ পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মৌলবাদ তার প্রভাব বিস্তার করেছে ।
২০০৯ এর আগে পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় চৌত্রিশ বছর সদরে প্রতিক্রিয়াশীল বিএনপি, জাতীয় পার্টি এমপি নির্বাচিত হয়েছে । হিন্দু সম্পত্তি গ্রাস আর মাদ্রাসা বৃদ্ধি পেয়েছে । শিক্ষার হার নিম্নমুখী হয়েছে । বরং মধ্যপ্রাচ্য, ইতালি , মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুরে অল্পশিক্ষিত অদক্ষ শ্রমিক রপ্তানী করে আমরা রেমিটেন্সে বাংলাদেশে দ্বিতীয় অবস্থানে গিয়েছি।
এই প্রেক্ষাপট শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া নয়, প্রায় সারাদেশের চিত্রই এ ধরনের । তাই তো লক্ষীপুরে করোনায় সামাজিক দূরত্ব রক্ষা না করে মোনাজাতে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়, চাঁদে অনেকেই সাঈদীকে দেখতে পান ।
এর থেকে মুক্তির উপায় হল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শিক্ষার আলো সর্বত্র পৌঁছে দেয়া এবং প্রগতিশীল চিন্তা চেতনা ও সংস্কৃতির বিকাশ সাধন । ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিকুল পরিবেশ সত্ত্বেও এই কাজটি করছেন অনেক শিল্প সাহিত্যিকে, সাংবাদিক, শিক্ষক, সমাজকর্মী, ছাত্র, রাজনীতিবিদ । যার প্রভাব এখন গ্রামেগঞ্জে গেলে দেখতে পাবেন সারারাত তথাকথিত হুজুরদের ওয়াজ নসিহত সত্ত্বেও মেয়েরা এখন পড়াশোনা করছে, হাটে মাঠে কাজ করছে । নারী পৌরসভার মেয়র হচ্ছেন, উপজেলা চেয়ারম্যান হচ্ছেন । মুক্তচিন্তার বিকাশ সাধনে আরও কাজ করতে হবে । সবাইকে সমালোচনা না করে এগিয়ে আসতে হবে ।
কিন্তু জানাজার লাখো মানুষ দেখে যারা ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে গাল দেন তাদের আমি ভদ্র ও প্রগতিশীল ভাবতে পারছিনা । কেন না জানাজার সাধারণ মানুষ নয় আশে পাশের জেলা থেকেও মাদ্রাসার শিক্ষক ছাত্ররা সমবেত হয়েছিল। করোনায় এর প্রভাব ভয়াবহ হবে সন্দেহ নেই । তাই অবশ্যই এটি নিন্দনীয় । কিন্তু এর দায় লকডাউনে থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর নয় । মবকে ঠেকানো কারো পক্ষেই সম্ভব নয় । হয়তো আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এতবড় জমায়েত হওয়ার আগে উৎসমুখে আটকে দিতে পারত। তবে আবারও বলছি অন্যত্র হলেও এমনটিই ঘটত। তাই যে বা যারা ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে গাল দিচ্ছেন তাদের এই আচরণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি । আমি মনে করি, সাংবাদিক জাতির বিবেক। তাঁকে কিছু বলার আগে এই বিষয়টি অবশ্যই ভাবতে হবে।একজন জ ই মামুন পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে গাল দিতে পারেন না । তাঁকে অবশ্যই ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।