করোনার থাবায় বাংলাদেশের ক্রিকেটে যে ক্ষতি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল
ফাইল ছবি

করোনা আতঙ্কে থমকে আছে পুরো বিশ্ব। থেমে আছে অর্থনীতির চাকা, ভয়াবহ মন্দার মুখে বিশ্ব। কোভিড-১৯ ভাইরাসের কারণে এখন প্রায় প্রতিটি দেশেই চলছে লকডাউন। যার কারণে ঘরে বসেই দিন কাটাতে হচ্ছে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের মানুষকে। অন্য অনেক কিছুর মতো বন্ধ আছে ক্রীড়াযজ্ঞও। বাংলাদেশে আপাতত সব ধরনের খেলাধুলা বন্ধ। বাংলাদেশ সরকারের ক্রীড়া মন্ত্রণালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের খেলাধুলা স্থগিত করেছে।

ক্রীড়াক্ষেত্রে বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত দিকটি হলো ক্রিকেট। ক্রিকেট খেলুড়ে প্রতিটি দেশের বোর্ডই এখন চিন্তিত। আপাতত ক্রিকেটারদের বেতন ভাতা পরিশোধ করতে পারলেও করোনা পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক না হয় তাহলে ভবিষ্যতে কী হবে তা নিয়ে শঙ্কিত বোর্ডগুলো।

universel cardiac hospital

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) বলেছে, আপাতত তারা ক্রিকেটারদের বেতন কাটবে না। কিন্তু কথা হলো, বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে তো আছেন ১৭ জন ক্রিকেটার। এর বাইরে যেসব ক্রিকেটার আছেন তাদের কী হবে? যে সমন্ত ক্রিকেটারের উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম লিগ খেলা তারাও বা কী করবে?

বর্তমানে ওয়ানডে ফরম্যাটে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল শুধু বেতন থেকে পান ৬ লাখ টাকার ওপরে। মুশফিকুর রহিমের বেতনও ৬ লাখের ওপরে। এখন কোনো ক্রিকেট না চললেও ক্রিকেটারদের ঠিকই বেতন দিয়ে যেতে হচ্ছে বিসিবিকে।

চলছিল বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম আসর ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ। এই লিগের দিকেই তাকিয়ে থাকেন ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা ক্রিকেটাররা। কিন্তু শুরু হতে না হতেই করোনার কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়।

ক্রিকেট খেলা যত চালু থাকবে ক্রিকেট বোর্ড এবং ক্রিকেটারদের ততই লাভ। খেলা চালু থাকলে ক্রিকেটাররা আর্থিক দিক থেকে যেভাবে লাভবান হন ঠিক তেমনই ক্রিকেটার দক্ষতার উন্নতি হয়। সেই সাথে উঠে আসে নতুন নতুন সব প্রতিভা।

করোনার কারণে অন্যসব মানুষের মতো ক্রিকেটাররাও ঘরবন্দি। খেলাধুলার মধ্যে না থাকলে ক্রিকেটারদের ফিটনেস ধরে রাখাও কঠিন। যদি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ক্রিকেটারদের ফিটনেস ধরে রাখার জন্য কিছু নিয়ম করে দিয়েছেন। সেই নিয়ম মেনে ক্রিকেটাররা বাসায় থেকেই ফিটনেস কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বল-ব্যাটের অনুশীলন তো তারা করতে পারেছন না।

কোভিড-১৯ ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্ট স্থগিত হয়ে গিয়েছে। মার্চে মুজিববর্ষ উপলক্ষে মিরপুরে দুইটি বিশেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছিল বিসিবি। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে তা স্থগিত করা হয়। এই দুইটি ম্যাচের আগে এআর রহমানের একটি কনসার্ট হওয়ার কথা ছিল। সেটাও স্থগিত করা হয়েছে।

এই দুইটি বিশেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বিশ্বের খ্যাতনামা ক্রিকেটারদের অংশ নেয়ার কথা ছিল। সামনে সময় করে এই ম্যাচ আয়োজন করার কথা ছিল। কিন্তু যে সমস্ত ক্রিকেটারদের এই ম্যাচে অংশ নেয়ার কথা ছিল ভবিষ্যতে তাদের পাওয়া যাবে কিনা সেটাও দেখার বিষয়। সামনে হয়তো নতুন করে ক্রিকেটার খুঁজতে হবে বিসিবিকে।

এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে একটি ওয়ানডে ও একটি টেস্ট ম্যাচ খেলতে পাকিস্তান সফরে যাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ দলের। কিন্তু তা স্থগিত হয়ে গিয়েছে। মে মাসে টাইগারদের আয়ারল্যান্ড সফর ছিল। তাও স্থগিত হয়েছে। জুনে অস্ট্রেলিয়া দলের বাংলাদেশ সফরও আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। আগস্টে নিউজিল্যান্ড দলের বাংলাদেশ সফর এখন অনিশ্চিত।

অক্টোবর-অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশ্বকাপের আগে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপ। এই টুর্নামেন্টের ভবিষ্যৎও এখন অনিশ্চিত।

করোনার কারণে বিসিবিতে বড় যে প্রভাবটি পড়েছে সেটি হলো, বিসিবি স্পন্সর খুঁজে পাচ্ছে না। এই ক্রান্তিকালে আপাতত আগ্রহ দেখাতে চাচ্ছে না কোনো প্রতিষ্ঠান। পুরোনো স্পন্সর ইউনিলিভারের সঙ্গে বিসিবির চুক্তি গত জানুয়ারিতে শেষ হয়েছে। তারা আর চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে ইচ্ছুক নয়।

ইউনিলিভারের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দুই বছরের জন্য ৫০ কোটি টাকা মূল্যের টিম স্পন্সরশিপ আহ্বান করে বিসিবি। কিন্তু কোনো স্পন্সরই আগ্রহ দেখায়নি। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্তর্বর্তীকালীন স্পন্সর ছিল আকাশ ডিটিএইচ। কিন্তু বিসিবি চাইছে দীর্ঘমেয়াদী স্পন্সর।

জাতীয় দলের স্পন্সর খোঁজার পাশাপাশি নতুন ব্রডকাস্টার নিয়োগের জন্য সন্ধান করছে বিসিবি। কেননা চলতি এপ্রিলে গাজী টিভির সাথে চুক্তি শেষ হতে যাচ্ছে।

করোনা পরিস্থিতি যদি দ্রুত সমাধান হয়ে যায় তাহলে সেটি পুরো বিশ্বের জন্য মঙ্গলজনক। কিন্তু করোনার প্রকোপ যদি দীর্ঘদিন ধরে থাকলে তাহলে ক্ষতির পরিমাণও বাড়বে। আপাতত যেসব সিরিজ স্থগিত হয়েছে পরবর্তীতে এগুলো হওয়ার কথা। কিন্তু এসব স্থগিত সিরিজের সংখ্যা বাড়তে থাকলে ভবিষ্যতের অন্য সিরিজগুলোর সাথে সাংঘর্ষিক হবে। অর্থাৎ, কিছু সিরিজ হয়তো বাধ্য হয়ে বাতিল করতে হবে।

প্রতিটি সিরিজ বা টুর্নামেন্টেই প্রতিটি বোর্ডের বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় হয়ে থাকে। সিরিজের সাথে অনেক কিছুই সংশ্লিষ্ট থাকে। যেমন স্পন্সর, ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি, ক্রিকেটারদের উইনিং বোনাস। সুতরাং, একটি সিরিজ না হলে তাতে বোর্ড এবং ক্রিকেটার উভয় পক্ষেরই আর্থিক ক্ষতি হবে।

ক্রিকেট বন্ধ থাকয় আইসিসিও কী করবে? আপাতত ঢাকা বিশ্ব ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি পুরাতন সব গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলো ভক্তদের দেখানোর উদ্যোগ নিয়েছে। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আগের সব উত্তেজনকার ম্যাচের ভিডিও দেখাচ্ছে আইসিসি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে