উত্তরাঞ্চলের প্রায় সব চালের কল বন্ধ। ধানের যে দাম তাতে চাল করে পোষায় না। করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বেশি দামে ধান কিনে চাল করে অনেক ব্যবসায়ীকে লোকসান দিতে হয়েছে। এছাড়া বছর শেষে অনেকে চালকলগুলো মেরামত করছেন। বিশেষ করে অটোরাইস মিল এবং সেমি অটোরাইস মিলগুলোতে এখন মেরামতের কাজ চলছে। সারাবছর একবারই মেরামতের কাজ হয়। এ সময় যেহেতু ধানের সংকট হয় তা ছাড়া মৌসুমও শেষ সে কারণে অনেকে মিল বন্ধ রেখে মেরামতের কাজ করছেন।
চালকল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বগুড়ার শেরপুর, নওগাঁ, কুস্টিয়া ও দিনাজপুরে চার হাজার ১৫০টি মিলের মধ্যে দুই-চারটা বাদে প্রায় সব চাল কলই এখন বন্ধ।
চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আমনের মৌসুম শেষ। আর ক’দিন পরই আসবে বোরোধানের মৌসুম। এখন গৃহস্থের ঘরে বিক্রি করার মতো কোনো ধান নেই। যা ধান আছে তা মজুতদারদের হাতে। আমনের সিজনের সময় যে ধান ৬০০ টাকা মণ ছিল সেটা এখন ৯০০ থেকে হাজার টাকা হয়েছে। আর চিকন ধান সিজনের সময় যেটা ৮০০ ছিল সেটা এখন ১২০০ টাকা। এই দামে ধান কিনে মোকামে চালের যে মার্কেট প্রাইজ তাতে তাদের পোষায় না। তা ছাড়া অনেক মিলমালিকের ঘরে হাজার হাজার বস্তা চাল আছে। ১৫-২০ দিন চাল না ভাঙালেও তাদের তেমন সমস্যা হবে না।
- আরও পড়ুন >> ইতিহাসে প্রথমবার তেলের দাম শূন্যেরও নিচে!
দিনাজপুরের চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহিদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন গণমাধ্যমকে বলেন, দিনাজপুর জেলায় প্রায় এক হাজার ৬৫০টি চালের মিল আছে। এর মধ্যে ২০০টি অটোরাইস মিল। বর্তমানে অধিকাংশ মিল বন্ধ। অনেকে চালকল মেরামত করছে। তাছাড়া দিনাজপুরে প্রায় এক হাজার ২০০টি হাসকিং চালকল আছে, এগুলো প্রায় সারাবছর বসেই থাকে। কারণ মানুষ এখন অটোরাইস মিলের চাল ছাড়া কেউ চাল খেতে চায় না। তিনি বলেন, নতুন সিজন শুরু হতে প্রায় এক মাস লাগবে।
কথা হয় শেরপুরের (বগুড়া) যমুনা সেমি অটোরাইস মিলের স্বত্বাধিকারী আইয়ুব আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, শেরপুরে এক হাজার চালের কল আছে। এগুলোর মধ্যে অধিকাংশই এখন বন্ধ। পাঁচটি অটোরাইস মিল আছে সেগুলো সারাবছরই চলে। এ সময় যেহেতু ধান কম সে কারণে সেগুলো মেরামতের কাজ করছে।
তিনি বলেন, ধানের মোকামে এখন ধানের সংকট। ধান যা আছে তা আবার অতিরিক্ত দাম। এই দামে ধান কিনে মিল মালিকরা চাল বিক্রি করে পোষাতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, চাতালগুলো চালু হতে এখনও এক মাস সময় লাগবে। সে কারণে সহসাই চালের দাম কমার কোনো সুখবর নেই। তবে নতুন ধানের সিজন শুরু হলে তখন চালের দাম কমে আসবে। তখন ধানের দামও কমবে।
কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন সেখানকার চালের কলগুলো প্রসঙ্গে বলেন, কুষ্টিয়ায় প্রায় ৩০০ মিল আছে যার সবগুলো চালকলই এখন বন্ধ।
- আরও পড়ুন >> ছয় লাখ অভিবাসীকে বৈধতা দিতে যাচ্ছে ইতালি
তিনি বলেন, এক মৌসুমের শেষ এবং আরেক মৌসুমের শুরুতে এমন অবস্থাই হয়। এ সময় পুরাতন ধানের দাম অতিরিক্ত হওয়ার কারণে ধানও পাওয়া যায় না।
নওগাঁ চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, নওগাঁয় ১২০০ চালকল আছে। এর মধ্যে ৫৫টি আছে অটোরাইস মিল। এগুলোর মধ্যে এখন প্রায় অধিকাংশই বন্ধ রয়েছে। এটা অন্য কোনো কারণে নয়। সিজন শেষে এমন অবস্থা হয়। বোরো সিজন শুরু হলে আবার চালকলগুলো রাতদিন চালু থাকবে।