বিশ্বজুড়ে এখন ‘কোভিড ১৯’-এর রাজত্ব। এই মরণ ভাইরাসে সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত সাড়ে ২৫ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন এক লাখ ৭৭ হাজার। চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনায় বর্তমানে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৮ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা ৪৫ হাজার। এর মধ্যে শুধু নিউ ইয়র্কেই মারা গেছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ।
বিশ্বের এমন ভয়ানক পরিস্থিতিতে সেই নিউ ইয়র্কসহ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শহরে বাস করছেন বহু বাংলাদেশি তারকা। সম্প্রতি তাদের মধ্য থেকে ২১ জন প্রবাসী অভিনয়শিল্পীর সমন্বয়ে বানানো একটি ভিডিও বার্তা ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে তারকারা জানিয়েছেন, এবারের যাত্রায় বেঁচে ফিরলে তারা কে কী করবেন। ২১ জনের মধ্যে ১৪ জনই কথা বলেছেন মৃত্যুপুরী নিউ ইয়র্ক থেকে।
নিউ ইয়র্ক থেকে অভিনেত্রী রিচি সুলাইমান বলেন, ‘এক অদেখা শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন আমাদের নার্স এবং ডাক্তার ভাই-বোনেরা। যুদ্ধ করছে প্রশাসন। অদেখা শত্রুর মাঝ থেকে নিউজ এনে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন আমাদের সাংবাদিক ভাই-বোনেরা। ডেলিভারি ম্যান, পোস্টম্যান, ব্যাংকার প্রতিনিয়ত প্রতি মুহূর্ত আমাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। পৃথিবীর সব ভালোবাসা একসঙ্গে করে তাদের ঢেলে দিলেও কম হয়ে যাবে। আমরা চিরকৃতজ্ঞ, চিরঋণী আপনাদের কাছে। রইল অনেক ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা।’
জর্জিয়ার আটলান্টা শহরে থাকেন অভিনেত্রী তানিয়া আহমেদ। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘এ যাত্রায় বেঁচে গেলে ভীষণ করে বাঁচব।’
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে বসবাসরত অভিনেত্রী মোনালিসা বলেছেন, ‘এ যাত্রায় বেঁচে ফিরলে পরিবারের সবাইকে জড়িয়ে ধরে অনেক করে কাঁদবো।’
অভিনেত্রী রোমানা ইসলাম খান। তিনিও থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে। এই তারকা বলেন, ‘এ যাত্রায় বেঁচে গেলে অন্যের কথা ভাববো।’
প্রবীণ অভিনেতা জামাল উদ্দিন হোসাইন। থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের আলবামা শহরে। তিনি বলেছেন, ‘এ যাত্রায় বেঁচে গেলে যার যেখানে অংশ আছে হিসাবগুলো চুকিয়ে দেবো।’
অভিনেত্রী মিলা হোসেন। থাকছেন নিউ ইয়র্কে। তিনি বলেন, ‘এ যাত্রায় বেঁচে গেলে একাকী নীড়ের ছানা দুমুঠো খেলো কি না, খবর নেবো।’
অভিনেতা শামীম শাহেদ। নিউ ইয়র্ক থেকে তিনি বলেন, ‘এ যাত্রায় বেঁচে যদি যাই, অন্যদের আগে বাঁচতে দেবো।’
জনপ্রিয় অভিনেত্রী শিরিন বকুল। তিনি নিউ ইয়র্ক থেকে বলেন, ‘ঘর থেকে বের হয়ে প্রথমে নদীর কাছে ক্ষমা চাইবো।’
দুই সন্তান নিয়ে নিউ ইয়র্কে বসবাসরত অভিনেত্রী শ্রাবন্তী কবিতার ভঙ্গিতে বলেন, ‘বন পাহাড় আর সাগর দেশে, বিনয় বেশে নত হবো।’
নাটক ও চলচ্চিত্রের প্রবীণ অভিনেতা কাজী উৎপল। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্জি থেকে তিনি বলেন, ‘এ যাত্রায় বেঁচে গেলে আমি ঋণ না হয়ে পরিশোধ হবো।’
নিউ ইয়র্ক থেকে অভিনেত্রী তমালিকা কর্মকার বলেন, ‘আর হবো না রাশভারী, থামিয়ে দেবো লোভ লালসার রাহাজানি।’
বহু জনপ্রিয় ছবিতে অভিনয় করা অভিনেত্রী ডলি জহুর বর্তমানে আছেন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে। তিনি বলেন, ‘ধর্ম নিয়ে মহাজনী, পবিত্র প্রাণের ইবাদাত হবো।’
নাট্য অভিনেতা টনি ডায়েসের স্ত্রী অভিনেত্রী প্রিয়া ডায়েস স্বামী-সন্তান নিয়ে বহু বছর ধরে আছেন নিউ ইয়র্কে। তিনি বলেন, ‘নতুন করে স্কুলে যাবো, কলেজে যাবো, ফুঁচকা খাবো, বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেবো আর হাসিগুলো ছড়িয়ে দেবো।’
অন্যদিকে টনি ডায়েস বলেন, ‘আর যদি না বাঁচি, যদি হারিয়ে যাই ওই একাকী অন্ধকারের দেশে!’
নিউ ইয়র্ক থেকে অভিনেতা আদনান ফারুক হিল্লোল বলেন, ‘হরিণঘাতক তীর হবো না, অসৎ পথের ভীড় হবো না।’
হিল্লোলের সঙ্গে একই শহরে থাকেন অভিনেত্রী নওশীনও। তিনি বলেন, ‘এ যাত্রায় সত্যি যদি বেঁচে যাই, যত অন্যায় পুষিয়ে দেবো, যত হিংসা মিটিয়ে দেবো।’
নাটক ও চলচ্চিত্রের প্রবীণ অভিনেত্রী আফরোজা বানু রয়েছেন কানাডার অটোয়া শহরে। তিনি বলেন, ‘বেঁচে যদি যাই এবার, আমার শেকড় আমি সবখানে রাখবো।’
নিউ ইয়র্ক থেকে অভিনেতা খাইরুল ইসলাম পাখি বলেন, ‘বাড়ি ফিরলে এবার মায়ের শাড়ির আঁচল হবো, বউয়ের চোখের কাজল হবো, ছেলের কাছে ঘোড়া হবো।’
প্রবীণ অভিনেত্রী রওশন আরা হু্সাইন। থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা শহরে। তিনি বলেন, ‘অন্তত দূর আকাশের চাঁদটি হবো, যতটুকু পারি আলো ছড়াবো।’
নিউ ইয়র্ক থেকে অভিনেত্রী লুৎফুন নাহার লতা বলেন, ‘তবুও আমি দূর আকাশের চাঁদটি হবো, সবার তরে আলো ছড়াবো।’
ভিডিওটির সমাপনী বার্তায় অভিনেতা টনি ডায়েস বলেন, ‘আপনারা এতক্ষণ যাদের দেখলেন, আমরা সবাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শহরে আছি। কাউকে কিন্তু ঘর থেকে বের হতে হয়নি। কারণ পুরো পৃথিবী এক অদৃশ্য শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করছে, আমরাও করছি। আমরা সবাই এই সুন্দর পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে চাই। কাউকে আমরা হারাতে চাই না।’