২ এপ্রিল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবার কথা ছিল। আর সিদ্ধান্ত ছিল এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে পরীক্ষা শেষ হবার ৬০ দিনের মধ্যে। ৫ মার্চ এসএসসির ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে, সে হিসাবে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ফল প্রকাশ হবে এমন প্রস্তুতি ছিল দেশের সবগুলো বোর্ডের। কিন্তু করোনার কারণে সবই আটকে গেছে। করোনা দুর্যোগের কারণে সব কার্যক্রমই পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে শিক্ষামন্ত্রণালয়।
এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল ১২ লাখ শিক্ষার্থীর। আর ২০ লাখ শিক্ষার্থী এসএসসির ফল প্রকাশের জন্য অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে রয়েছে নানা শংকা উদ্বেগ। তাদের অপেক্ষার প্রহর কবে শেষ হবে তা কেউ বলতে পারছে না। বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের হার যেভাবে বাড়ছে তাতে অতিশিঘ্রই পরিস্থিতি পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।
শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতি ভালো হলে ১৫ দিনের মধ্যে এসএসসির ফল প্রকাশ এবং ২০ দিন সময় হাতে রেখে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। গতকাল মঙ্গলবার দেশের বড় এ পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ সংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডের চেয়াম্যানদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠক করেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
তথ্য অনুযায়ী, এসএসসির ফল প্রকাশের কাজ প্রায় ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শিক্ষকরা পরীক্ষার খাতা ও ওএমআর (উত্তরপত্র) শিট শিক্ষাবোর্ডে পাঠাতে পারছেন না। বোর্ডে পৌঁছানোর পর এই ওএমআর সিট স্ক্যান করতে হবে। এ কারণে কর্মচারি ও কর্মকর্তাদের অফিসে উপস্থিত থাকতে হবে। বোর্ডে খাতা পৌঁছালে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের সকল প্রস্ততি শেষ করা সম্ভব হবে বলে বোর্ড থেকে সচিবকে অবহিত করা হয়েছে।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তত্ত্বীয় এবং ৫ মার্চ ব্যাবহারিক পরীক্ষা শেষ হয় এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থীর। শিক্ষাপঞ্জি অনুসারে, এক যুগ ধরেই পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যেই ফল প্রকাশ করা হয়। সেই হিসাবে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হওয়ার কথা; কিন্তু মন্ত্রণালয় ও বোর্ডের কর্মকর্তাদের ধারণা
এবার করোনাভাইরাসের কারণে সব কিছু বন্ধ থাকায় যথাসময়ে প্রকাশিত হচ্ছে না এসএসসির ফল। তবে ফল প্রকাশে বিলম্ব হলে একাদশে ভর্তির ক্ষেত্রেও জটিলতা তৈরি হবে। তবে এ বিষয়ে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রমের সময় কমিয়ে দেড় মাসের বদলে এক মাসের মধ্যে শেষ করতে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাসব্যাপী বন্ধের কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এমন প্রস্তাব করা হয়েছে।
সূত্র মতে, পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে আগের রীতিনীতি অনুসরণ করা না হলেও এবার শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইট ও এসএমএসের মাধ্যমে এ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হতে পারে। এজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন নম্বর নেওয়া হতে পারে। ইতিমধ্যে একটি বোর্ড অভিভাবকদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহের জন্য নোটিশও জারি করেছে।
অন্যদিকে সবচেয়ে উদ্বেগে আছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। সব প্রস্তুতি শেষ হবার পরও পরীক্ষায় বসতে না পারায় নানা শংকা রয়েছে তাদের। পরীক্ষার্থী সায়মা আক্তার বলেন, ‘সব প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু মনে হচ্ছে সব আবার ভুলে গেছি। এ কারণে নানা শংকা রয়েছে। আর প্রতিনিয়ত যেভাবে করোনার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে তাতে নিজেও ভয় পাচ্ছি।’
আমিরুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, আর কবে পরীক্ষা হবে তা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে আছি। পরীক্ষা শেষ হলে আবার পাবলিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হবে। সব নিয়ে নানা শংকা রয়েছে।’
করোনার কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কয়েক দফা বাড়িয়ে তা এখন ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। মার্চ মাসের শেষের দিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সিটি পরীক্ষার সূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে এপ্রিলের শুরুতেই প্রথম সাময়িক পরীক্ষা হওয়ার কথা; কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সিটি এবং প্রথম সাময়িক পরীক্ষা অলিখিতভাবে স্থগিত করতে হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, করোনার কারণে স্কুলে ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। প্রয়োজনে ঐচ্ছিক ছুটি কমিয়ে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া হবে।