তৈরি পোশাক কারখানাসহ রফতানিমুখী শিল্পের জন্য ঘোষিত ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের প্রথম কিস্তি ২ হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছে অর্থ বিভাগ।
গত সোমবার (২০ এপিল) এ অর্থ ছাড় করা হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
অর্থ ছাড় পত্রে বলা হয়, এই অর্থ দিয়ে যে সকল প্রতিষ্ঠান ন্যূনতম ৮০ ভাগ পণ্য রফতানি করে তাদের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন প্রদান করা হবে। তবে এই তহবিল থেকে এই সব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মকর্তার বেতন-ভাতা দেয়া যাবে না। পাশাপশি যেসব প্রতিষ্ঠান লে-অফ ঘোষণা করে তবে তারা এ তহবিল থেকে ঋণ সুবিধা পাবে না।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, স্বল্প সময়ে বেতন প্রদানে জটিলতা এড়াতে ঋণের প্রথম কিস্তির অর্থছাড়ে শ্রমিকদের তালিকা প্রণয়নসহ (ডাটা বেজ) আনুষঙ্গিক তথ্যের শর্তটি শিথিল করা হয়েছে। এই মধ্যে শ্রমিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা মোবাইল ব্যাংকের তথ্যও রয়েছে। তবে দ্বিতীয় কিস্তির ঋণের অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে এগুলো পরিপূর্ণভাবে দিতে হবে। গত ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রণোদনা ঋণ তহবিলের ঘোষণা দেন।
ইতোমধ্যে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা জারি করেছে। নীতিমালা অনুযায়ী, যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান মোট উৎপাদনের ন্যূনতম ৮০ শতাংশ রফতানি করে, তারা রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জে এই তহবিলের অর্থ পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবে। যেসব কারখানা সচল আছে, তারাই কেবল ঋণ পাবেন। কোনো প্রতিষ্ঠান লে-অফ করলে এ তহবিল থেকে ঋণ নিতে পারবে এটি নতুন করে যুক্ত করেছে অর্থ বিভাগ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় আরও বলা হয়, যেসব প্রতিষ্ঠান ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন-ভাতা ইতোমধ্যে দিয়ে দিয়েছে, তারাই কেবল সচল কারখানা হিসেবে বিবেচিত হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান তিন মাসের বেতন-ভাতা দেওয়ার সমপরিমাণ অর্থ ঋণ হিসেবে নিতে পারবেন এই তহবিল থেকে। এই তিন মাস হচ্ছে-এপ্রিল, মে ও জুন। এই ঋণের গ্রেস পিরিয়ড হবে ছয় মাস। ঋণের পুরো অর্থ শোধ করতে তারা দুই বছর সময় পাবেন। ৬ মাস গ্রেস পিরিওডের পরের ১৮ মাসে ১৮ কিস্তিতে ঋণের টাকা শোধ দিতে হবে। কোনো ঋণ গ্রহিতার ঋণের কিস্তি যথাসময়ে পরিশোধিত না হলে প্রচলিত নিয়মে ওই ঋণ শ্রেণিকরণ করা হবে এবং ঋণ গ্রহিতা খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবে। এক্ষেত্রে বকেয়া কিস্তির উপর ২ শতাংশ হারে সুদ আরোপ করা হবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, মজুরির টাকা সরাসরি শ্রমিকের ব্যাংক হিসাব বা মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে (এমএফএস) পাঠিয়ে দেবে ব্যাংক।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, এখন পত্রিকায় খুললেই দেখা যাচ্ছে বেতন-ভাতার দাবিতের বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আসছে। এতে দেশে চলমাল লকডাউন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ব্যাপক সংখ্যক শ্রমিক রাস্তা নেমে আসার কারণে করোনা ছড়িয়ে পরারও মারাত্মক ঝুঁকি দেখা যাচ্ছে। তাই কিছু শর্ত শিথিল করে এই অর্থ ছাড় করা হয়েছে। তবে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ পেতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী সকল শর্তই পূরণ করতে হবে।
এর আগে, করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মজুরি দেয়ার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন।
এদিকে গত রোববার (১৯ এপ্রিল) অর্থ বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়ে দেয়া হয়, কোনো লে-অফকৃত কারখানা এই তহবিল থেকে কোনো ঋণ পাবে না।
অর্থ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান খান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের কারণে সচল রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা প্রদানের লক্ষ্যে ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ সুবিধা প্রদানের বিষয়ে অর্থ বিভাগের মতামত হচ্ছে- যে সব শিল্প প্রতিষ্ঠান ৮০ শতাংশের অধিক সরাসরি পণ্য রফতানি করে থাকে তাদের এলসি পরীক্ষা সাপেক্ষে কেবলমাত্র শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের লক্ষ্যে গঠিত ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল হতে ঋণ প্রদান করা যাবে।
তবে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান যদি লে-অফ ঘোষণা করে তাহলে ওইসব প্রতিষ্ঠান এ তহবিল থেকে ঋণ পাবে না। ৮০ শতাংশের কম বিবেচিত রফতানিকারকরা ২০ হাজার কোটি টাকার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল থেকে এসব প্রতিষ্ঠান ঋণ নিতে পারবে। যা দিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাবে।
বাংলাদেশের শ্রম আইনের ভাষায়, লে-অফ হলো কোনো কারখানায় কাঁচামালের স্বল্পতা, মাল জমে যাওয়া কিংবা যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ায় শ্রমিককে কাজ দিতে না পারার অক্ষমতা প্রকাশ করা।
শ্রম আইন অনুযায়ী, লে-অফ চলাকালে প্রথম ৪৫ দিনের ক্ষেত্রে পূর্ণকালীন শ্রমিকের মোট মূল মজুরি, মহার্ঘ্য ভাতার অর্ধেক দিতে হয় মালিককে। পরের ১৫ দিনের জন্য শ্রমিক পাবে পাবে ২৫ শতাংশ মূল বেতন এবং বাড়ি ভাড়া।