গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিট যেভাবে কাজ করবে

বিশেষ প্রতিনিধি

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিট কাজ করবে যেভাবে

চীনের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস পরীক্ষার র‍্যাপিড কিট ‘জিআর কভিড-১৯ ডট ব্লট’ শনিবার হস্তান্তর করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।

গতকাল শনিবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার্স ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) কাছে এই কিট হস্তান্তর করেছে তারা। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য-আরএনএ বায়োটেক লিমিটেডের গবেষকরা কিটটি তৈরি করেছেন। এখন এগুলো সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

পরীক্ষার আগে এই বিষয়ে সরকারি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে না চাইলেও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছেন যে তাদের ১০ হাজার কিট প্রস্তুত আছে যার মধ্যে পরীক্ষার জন্য কয়েকশ’ নিতে পারে সরকার। সরকার যেন তুলনা করতে পারে সেজন্য এটা দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এই কিট দেয়ার পর কিছুদিনের মধ্যে সরকার চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। অনুমোদন পাওয়ার পর পর্যায়ক্রমে এক লাখ কিট দেয়া হবে বলে জানানো হয়।

এর আগে গত ২০শে এপ্রিল কিট জমা দেয়ার কথা থাকলেও বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে ল্যাবে যান্ত্রিক ত্রুটি তৈরি হওয়ায় সেই ব্যাচটি বরবাদ হয়ে যায়। ফলে পুরো ব্যাচটিই নতুনভাবে তৈরি করতে হয়েছে। যার কারণে ঠিক সময়ে সেগুলো হস্তান্তর করা যায়নি।

গত ১৭ই মার্চ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র জানায় যে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের পরীক্ষার জন্য তারা একটি কিট তৈরি করেছে। করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণের ‘জিআর র্যাপিড ডট বট ইমিউনোঅ্যাসি’ কিট তৈরির জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গবেষক দলের নেতৃত্ব দেন ড. বিজন কুমার শীল।

যেভাবে কাজ করবে গণস্বাস্থ্যর এই কিট

ব্লাড গ্রুপ যে পদ্ধতিতে চিহ্নিত করা হয়, র্যাপিড ডট ব্লট নামের এই কিট অনেকটা একই রকম পদ্ধতিতে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানান, বিশ্বের অন্যান্য র্যাপিড টেস্ট কিটগুলোয় সাধারণত শুধু অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয়ে থাকে – যেটা ভারতে হয়েছে। ফলে সেখানে অনেক সময় ভুলভ্রান্তি হতে পারে। গণস্বাস্থ্যের এই কিটে অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন, দুইটাই পরীক্ষা করা হবে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জানান, সিরিঞ্জের মাধ্যমে তিন সিসি রক্ত নেয়ার পর সেটা সিরাম আর সেল আলাদা করে ফেলা হবে। পরে সেটা থেকে অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করে দেখা হবে।

সব মিলিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে ১৫ মিনিট সময় লাগবে বলে তিনি জানান। এর মধ্যেই বোঝা যাবে যে, রক্তদাতা করোনা ভাইরাসের পজিটিভ নাকি নেগেটিভ।

এই কিটগুলো ব্যবহার করে তারা ৯৩ শতাংশের বেশি সাফল্য পেয়েছেন বলে জানান জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

সংক্রমিত বাংলাদেশিদের রক্তের উপর গবেষণার পরই এসব কিট তৈরি করা হয়েছে বলে তিনি জানান। এর আগে সরকার ৫টি রক্তের নমুনা পাঠানোর পর সেগুলোর উপর গবেষণা চালানো হয়।

কী সুবিধা দেবে এসব কিট?

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলছেন, “লকডাউন তুলে দেয়ার পর দেশ বিদেশ থেকে অনেক মানুষ আসতে শুরু করবে। তাদের দ্রুত পরীক্ষা করতে হবে। সেজন্য এই টেস্ট কিটগুলো উপকারে আসবে।”

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জানান, এসব কিট ব্যবহার করতে স্বাস্থ্যকর্মীদের সহজেই প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব। ফলে দেশের যেকোনো স্থানে এই কিট ব্যবহার করে করোনা ভাইরাস রোগীদের দ্রুত শনাক্ত করা যাবে। বিশেষ করে বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোয় বেশি কাজে আসবে। এগুলোর দাম কতো হতে পারে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে