১৯৮৩ সালের ‘কুলি’ ছবির শুটিং চলাকালীন প্রাণঘাতী দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন বলিউডের ‘শাহেনশাহ’ খ্যাত সুপারস্টার অমিতাভ বচ্চন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। সে খবর পাওয়া মাত্র হাসপাতালের বাইরে অভিনেতার আরোগ্য কামনা করে ভিড় করেছিলেন হাজার হাজার ভক্ত।
এছাড়া শাহরুখ খান থেকে শুরু করে সালমন খান, আমির খান বা হৃতিক রোশন, অক্ষয় কুমার- এরা যেখানেই যান না কেন, তাদের এক ঝলক দেখতে ভিড় জমিয়ে ফেলেন ভক্তরা। মাঝে মাঝে বাড়িতে এসেও হানা দেন। এটাই হল তারকা-খ্যাতি।
কিন্তু বলিউডে সবচেয়ে বড় তারকা-খ্যাতির রেকর্ড রয়েছে বাঙালি হিরো মিঠুন চক্রবর্তী। একাধারে বাংলা ও হিন্দি ছবিতে কাজ করা এই নায়ক তারকা-খ্যাতির যে রেকর্ড তৈরি করেছেন, তা এখনও পর্যন্ত বলিউডের কোনো অভিনেতাই ভাঙতে পারেননি। কেউ পারবে বলেও তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই।
১৯৭৬ সালে মৃণাল সেন পরিচালিত ‘মৃগয়া’ দিয়ে বলিউডে অভিষেক হয়েছিল মিঠুন চক্রবর্তীর। প্রথম ছবিতেই বাজিমাত করেছিলেন। দারুণ ব্যবসা করেছিল ‘মৃগয়া’। সেরা নবীন অভিনেতা হিসেবে সে ছবির জন্য মিঠুন জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছিলেন।
কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এই একটা ছবিই তাকে সাফল্যের সিঁড়িতে উঠিয়ে দিয়েছিল। এরপর কিছু ছবিতে তিনি খুব ছোট কাজ পেয়েছিলেন। কোনো কাজকেই ছোট করে দেখতেন না মিঠুন। তাই শুটিং সেটে স্পট বয়ের কাজও করেছেন। পাশাপাশি চলত তার অভিনয়ও। ১৯৭৮ সালে তার ‘মেরা রক্ষক’ ছবিটিও সুপার হিট হয়।
অভিনয়ের পাশাপাশি মিঠুনের আরও একটা গুণ ছিল। তিনি নাচেও খুব পারদর্শী ছিলেন। ১৯৮২ সালের ‘ডিস্কো ডান্সার’ছবিটিই ছিল সেই সিঁড়ি, যা মিঠুনকে তারকা-খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে দেয়। ‘ডিস্কো ডান্সার’ করে ভারতের বাইরে, বিশেষ করে রাশিয়া এবং কাজাখস্তানেও তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।
সে সময় মিঠুনের তারকা-খ্যাতি কোন পর্যায়ে পৌঁছেছিল তা একটা ছোট কাহিনি দিয়েই বোঝা যাবে। ‘ডিস্কো ডান্সার’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর একটা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কাজাখস্তান গিয়েছিলেন অভিনেতা। মিঠুন যে কাজাখস্তানে যাচ্ছেন, সে খবর আগেই পৌঁছে গিয়েছিল সেখানকার মানুষের কাছে। বিমানবন্দরের বাইরে লাখ লাখ মানুষের ভিড় জমেছিল শুধু মিঠুনকে এক ঝলক দেখবে বলে!
কাজাখস্তান যে তাকে এতটা ভালোবাসা দেবে, তা কল্পনাতেও ছিল না নায়কের। বিমানবন্দরের বাইরে পা রাখা মাত্রই ওই বিপুল সংখ্যক মানুষ একসঙ্গে ‘জিমি জিমি’ বলে চিৎকার শুরু করে। কারণ, ‘ডিস্কো ডান্সার’- মিঠুনের চরিত্রের নাম ছিল জিমি।
মজার কথা হচ্ছে, ওই একই দিনে কাজাখস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্টের একটি অনুষ্ঠানও ছিল। কিন্তু এত বেশি লোক মিঠুনের জন্য বিমানবন্দরের বাইরে চলে এসেছিলেন যে, প্রেসিডেন্টকে তার অনুষ্ঠান বাতিল করতে হয়েছিল। দেশটিতে এখনও হিন্দি সিনেমা খুব জনপ্রিয়। আজও সেখানকার মানুষ শাহরুখ-আমির-সালমানদের চেয়ে বেশি পছন্দ করেন মিঠুনকে।
এই নায়ক শুধু তারকা-খ্যাতির রেকর্ডই করেননি, এক বছরে সর্বাধিক ছবিতে অভিনয় করার রেকর্ডও তার দখলে। ১৯৮৯ সালে মিঠুনের একসঙ্গে ১৯টা ছবি মুক্তি পেয়েছিল। প্রতিটিতেই তিনি ছিলেন মুখ্য ভূমিকায়। মিঠুনের এই রেকর্ডও এখনও পর্যন্ত বলিউডের অন্য কোনো তারকা ভাঙতে পারেননি।