প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘মহান মে দিবসের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শ্রমিক এবং মালিক উভয়েই সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে কলকারখানার উৎপাদন বৃদ্ধিতে আরও নিবেদিত হবেন। শ্রমিকদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য শ্রমিক কল্যাণ গঠন করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রতিঘাত মোকাবিলায় দেশের রফতানি খাতের শ্রমিকদের বেতন দিতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে।’
আগামীকাল মহান মে দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দেয়া এক বাণীতে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘সকল শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নে সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের আগেই উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে সবাইকে একযোগে কাজ করার উদাত্ত আহ্বানও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও কার্যক্রম আরও সুদৃঢ় হয়েছে। মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সুসম্পর্ক বাজায় রাখা, নিরাপদ কর্ম পরিবেশ ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা বিভিন্নমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন (সংশোধন) আইন ২০১৩ ও বিধি, জাতীয় শিশু শ্রম নিরসন নীতি, জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি নীতিমালা এবং গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি প্রণয়ন করেছি। শিল্প কারখানায় বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্পে সার্বিক নিরাপত্তা সন্তোষজনক রাখার লক্ষ্যে মানসম্মত ও যথাযথ পরিদর্শন ও মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করেছি।’
এসব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সুফল শ্রমজীবী মানুষ পেতে শুরু করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে লাগসই প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও ব্যবহার এবং উন্নত ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকার দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবন-মান উন্নয়ন ও কল্যাণে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। আমরা পোশাক শিল্পসহ ৩৮টি শিল্প খাতের শ্রমিকদের জন্য নিম্নতম মজুরি ঘোষণা করেছি। শ্রমঘন গার্মেন্টস শিল্প খাতের শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি এক হাজার ৬৬২ টাকা থেকে পাঁচ হাজার ৩০০ টাকায় উন্নীত করেছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘ইতিমধ্যে শ্রম আইন যুগোপযোগী করে বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন ২০১৩ প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত ‘বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০৯১৫’ প্রণয়ন করা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া কলকারখানা চালু করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন শোষিত, বঞ্চিত, মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছেন। তিনি বলেছিলেন, বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত, একদিকে শোষক, আরেকদিকে শোষিত-আমি শোষিতের পক্ষে। শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে তিনি ১৯৭২ সালে শ্রমনীতি প্রণয়ন করেন। তিনি পরিত্যক্ত কলকারখানা জাতীয়করণ করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী এবং শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন।’
মহান মে দিবস শ্রমজীবী-মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক অবিস্মরণীয় দিন উল্লেখ করে তিনি দিবসটি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল দেশের মেহনতি মানুষের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা এবং তাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
উল্লেখ্য, ১৮৮৬ সালের এ দিনে আমেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমিকরা আত্মাহুতি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন শ্রমজীবী মানুষের মৌলিক অধিকার। প্রধানমন্ত্রী তাদের স্মৃতির প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা জানান।