অদ্ভুত দামে বিক্রি ফরিদীর চশমা

বিনোদন ডেস্ক

হুমায়ুন ফরীদি
হুমায়ুন ফরীদি। ফাইল ছবি

হুমায়ুন ফরিদী—এক কিংবদন্তীর নাম। সংশপ্তক, একাত্তরের যিশু, ভন্ড, বিশ্বপ্রেমিক, আহা—এরকম অনেক নাটক সিনেমার নাম নেওয়া যাবে যেগুলোতে তার অভিনয় অতুলনীয়। মঞ্চ, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র সর্বত্র দাপটে অভিনয় করা এ শিল্পীর ব্যবহৃত চশমা নিলামে তুলে ‘অকশন ফর অ্যাকশন’।

কিংবদন্তীর সে চশমাটি কিনে নিয়েছেন হাঙ্গেরি প্রবাসী এক বাংলাদেশি। তার দুই মেয়েকে চশমাটি উপহার হিসেবে দিবেন তিনি। কিন্তু নাম প্রকাশ করতে চান না। ছোটবেলা থেকে হুমায়ুন ফরিদী ভক্ত নিলাম বিজয়ী মানুষটি।

প্রবাসী বাংলাদেশির নিলামের মূল্যটি বেশ অদ্ভুত— ৩ লাখ ২৫ হাজার ১২ টাকা। এর কারণ অবশ্য ব্যাখা দিয়েছেন তিনি—আমার দুই মেয়ে। এক মেয়ের জন্মদিন ২৫ তারিখ আরেক মেয়ের ১২ তারিখ। তাই দুই মেয়েকে উপহারটি দিলাম।

করোনাআক্রান্ত মানুষদের সহায়তা করার জন্য এ আয়োজনটি করছে ‘অকশন ফর অ্যাকশন’। এর আগে সাকিব আল হাসানের ব্যাট, তাহসানের প্রথম ক্যাসেটের মাস্টার কপি নিলাম করা হয়েছে। সামনে নিলামে উঠবে ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা, কবি নির্মলেন্দু গুণ, পরিচালক-অভিনেত্রী দম্পতি মোস্তফা সর‍য়ার ফারুকী ও নুসরাত ইমরোজ তিশা, ব্যান্ড শিল্পী জেমস, নির্মাতা নুহাশ হুমায়ূনের প্রিয় জিনিস। এছাড়া কিংবদন্তি ফুটবলার মোনেম মুন্নার জার্সিও নিলাম করা হবে।

চশমাটি এতদিন সংরক্ষিত ছিলো হুমায়ুন ফরিদীর মেয়ে শারারাত ইসলাম দেবযানীর কাছে। তিনি নিলামে চূড়ান্ত মূল্য ঘোষণার পর বলেন, ‘এটা কোন কাকতাল কিনা জানি না। নাকি প্রকৃতির কোন খেলা। আমার বাবার চশমা, মানে একজন মেয়ে তার বাবার চশমা দিচ্ছেন আরেকজন বাবা তার মেয়েদের জন্য চশমাটা কিনছেন—এর থেকে সুন্দর আর কিছু হতে পারে না।’

‘অকশন ফর অ্যাকশন’র ফেসবুক পেইজে রাত সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া লাইভটি শেষ হয় ১২টার দিকে। সংস্থাটির উদ্যোক্তা প্রীত রেজা ও আরিফ আর হোসনের সঞ্চালনায় এতে অংশ নেন আফজাল হোসেন, আফসানা মিমি, তারিক আনাম খান, সাজু খাদেম, মিশা সওদাগর, ইরেশ যাকের, দেবযানী ও তার স্বামী কাজী সাবির।

নিলাম চলাকালীন সময়টুকু হয়ে উঠে ফরিদীময়। এতে উঠে আসে ফরিদীর মমত্ব, রসবোধ ও ভালোবাসার গল্প।

আফজাল হোসেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ফরিদী সম্পর্কে বলেন, ‘বাংলাদেশের যেমন অনেক গৌরভ গাথা রয়েছে। তেমন অনেক গৌরভ গাথার সমতুল্য যোগ্যতা এ অভিনেতার ছিলো।’

দেবযানী জানান, তিনি কখনো বাবার কাছ থেকে বকা খাননি। তবে রয়ে গেছে অসংখ্য স্মৃতি। জানালেন বাবার চমকে দেওয়ার গল্প।

ছোটবেলা থেকেই বাবা সবসময় ফোন করে জানতে চাইতো, কী লাগবে? কিন্তু সবসময় কিছু লাগবে না বলতেন দেবযানী। তখন মাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছেন। এরকম ফোন পাওয়ার পর তিনি লাল শাড়ি চাইলেন, যেহেতু কিছু না চাইলে বাবা কষ্ট পান। এরপর দিন তিনি বাসায় ঢুকে কয়েকটা প্যাকেটে ৮টি লাল রঙের শাড়ি পান বিভিন্ন শেডের। এ শাড়িগুলো তিনি অভিনেত্রী আফসানা মিমিকে দিয়ে কিনে পাঠিয়ে ছিলেন। এত শাড়ি কেন, বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন দেবযানী। উত্তর ফরিদী বলেছিলেন, তুমি লাল শাড়ি চেয়েছো। কিন্তু কোন ধরনের লাল তা তো বলো নি। সে শাড়িগুলো এখনও পরেন দেবযানী।

একবার রাতের বেলায় হুট করে ডাকাত দেখার জন্য তারিক আনামকে নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন ফরিদী। বহু কষ্টে তাকে অর্ধেক পথ থেকে ফিরিয়ে এনেছিলেন তারিক আনাম।

আফসানা মিমি জানান, তার জন্মদিনে হুমায়ুন ফরিদীর ১০ হাজার টাকা উপহার দেওয়ার গল্প। এরপর আর কোন জন্মদিনে তার কাছ থেকে উপহার পান নি মিমি। ইরেশ শুনিয়েছেন কীভাবে ফরিদীর শেষ ছবিগুলো তুলেছিলেন।

সাজু খাদেমকে রাতে বহুবার ফোন দিতেন ফরিদী। সাজুও তার কণ্ঠ নকল করে অন্য শিল্পীদের ভড়কে দিতেন। কিন্তু দুঃখ করে বলেন, ‘ফরিদী ভাই মরে যাওয়ার পর একজন আমাকে বলেছিলো এখন তো তুই কাউকে ভড়কে দিতে পারবি না তার কথা বলে। আসলেই কেউ এখন বিশ্বাস করবে না, আমি যদি বলি—আমি ফরিদী বলছি, আমার জন্য এটা রান্না করে পাঠাও।’

তাকে অনেক মিস করেন তার পরিবার ও সহশিল্পীরা। বাংলাদেশের মানুষরাও হুমায়ুন ফরিদীকে অনেক মিস করে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে