করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কুটির ও অতিক্ষুদ্র শিল্পের উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তা দিতে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৩ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে।
সরকারের কাছে চাওয়া হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছ থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এনজিওগুলোকে অর্থায়নকারী সংস্থা পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন থেকে আরও এক হাজার কোটি টাকার তহবিল জোগান দেয়া হবে। এসব অর্থ বিভিন্ন এনজিও, এসএমই ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক), পল্লী উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। ইতোমধ্যে গ্রামীণ অতি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ৩ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করেছে।
এ তহবিল থেকে এনজিওগুলোর মাধ্যমে ঋণ দেয়া হবে। ক্ষুদ্রঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) থেকে এ অর্থ বিতরণ করা হবে। এ বিষয়ে এমআরএ একটি নীতিমালা তৈরি করছে।
এতে বাংলাদেশ ব্যাংক এনজিওগুলোকে দেবে ৪ শতাংশ সুদে। এনজিওগুলো মাঠপর্যায়ে এসব ঋণ ৫ শতাংশ সুদে বিতরণ করবে। বর্তমানে এনজিওগুলো যে ঋণ বিতরণ করে সেগুলোর গড় সুদের হার ২৫-৩০ শতাংশ।
এনজিওগুলোকে কম সুদে তহবিল জোগান দেয় পিকেএসএফ। তারা ইতোমধ্যে করোনার প্রভাব মোকাবেলায় করণীয় সম্পর্কে সরকারের উচ্চপর্যায়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে তারা মাঠপর্যায়ে জরুরি ভিত্তিতে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করার তাগিদ দিয়েছে।
সংস্থাটি মনে করে, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা তাদের উৎপাদিত পণ্য বিপণন ও বিক্রি করতে না পারায় অর্থ সংকটে পড়েছে। একই তাদের পুনরায় ঋণের জোগান দেয়া না গেলে ভবিষ্যতে ঋণ ফেরত দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করা কঠিন হবে।
একই সঙ্গে গ্রামীণ অর্থনীতিকেও সচল রাখা যাবে না। তারা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা রেখে গ্রামীণ অর্থনৈতিক পাওয়ার হাউসগুলো পর্যায়ক্রমে খুলে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, মাঠপর্যায়ে এনজিওগুলোর ঋণের কিস্তি আদায় এখন স্থগিত থাকায় ঋণ বিতরণের সক্ষমতাও হারিয়েছে অনেক এনজিও। ফলে তাদের নতুন করে অর্থের জোগান দিতে হবে। এ জন্য পিকেএসএফ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ রেখেছে।
এ বিষয়ে পিকেএসএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ফজলুল কাদের বলেন, গ্রামীণ এলাকায় ৮০ শতাংশ লেনদেনের সঙ্গে এনজিওগুলো জড়িত। ফলে পল্লী এলাকায় অর্থের প্রবাহ বাড়াতে এনজিওগুলোয় বেশি করে কাজে লাগাতে হবে। কেননা তাদের নেটওয়ার্ক একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত।
সূত্র জানায়, সরকারের একাধিক সংস্থা ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের সঙ্গে জড়িত। তাদের মাধ্যমেও ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে বিসিককে ৬০০ কোটি টাকা, এসএমই ফাউন্ডেশনকে ৫০০ কোটি টাকা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর বাইরে সমবায় ব্যাংক, পল্লী উন্নয়ন বোর্ড থেকেও মাঠপর্যায়ে ক্ষুদ্র্রঋণ বিতরণ করা হবে।
এসএমই ফাউন্ডেশনকে এর আগে এডিবি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিছু অর্থায়ন করেছিল। সেই সূত্র ধরে তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। এ বিষয়ে অচিরেই সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।