দেরিতে নমুনার ফল আসায় সমন্বিতভাবে জানা যাচ্ছে না চট্টগ্রামের করোনা পরিস্থিতি। তবে চারদিন ধরে পাওয়া বিচ্ছিন্ন তথ্যগুলো গোছাতে গিয়ে শিউরে উঠছে স্বাস্থ্য বিভাগও। রোববার থেকে বুধ- এই চারদিনেই চট্টগ্রামে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৫৮ রোগী। এর মধ্যে মারা গেছেন ৬ জন!
স্বাস্থ্য বিভাগের মতে, হঠাৎ আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া চট্টগ্রামে আগামী দিনগুলোতে করোনা পরিস্থিতির অবনতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত রোববার (৩ মে) চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজে (বিআইটিআইডি) ১৮৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এসব নমুনায় করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয় ৫ জনের।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) ল্যাবে পরীক্ষায় এদিন আরও ৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়। সব মিলিয়ে রোববার মোট ১৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয় চট্টগ্রামে।
সোমবার (৪ মে) বিআইটিআইডি ল্যাবে নতুন ২৪৩টি নমুনা পরীক্ষায় ২২ জনের করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে ১৬ জনই চট্টগ্রামের বাসিন্দা।
পরদিন মঙ্গলবার (৫ মে) বিআইটিআইডি ল্যাবে আরও নতুন ২৩৯টি নমুনা পরীক্ষায় ৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
কিন্তু কারিগরি ত্রুটির কারণে এ দুইদিন কোনো ফল জানাতে পারেনি চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) ল্যাব।
বুধবার (৬ মে) চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটির (সিভাসু) ল্যাবের আগের দুই দিনে (৪ ও ৫ মে) পরিক্ষিত ১২২টি নমুনার ২২টি নমুনাই পজিটিভ হয়। এর মধ্যে ১২ জন চট্টগ্রামের।
সর্বশেষ বুধবার রাতে চট্টগ্রামের বিশেষায়িত হাসপাতাল বিআইটিআইডিতে ১৯০ নমুনা পরীক্ষায় আরও নতুন ১২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হন। তাদের মধ্যে ১১ জন চট্টগ্রামের বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। সবমিলিয়ে মাত্র চারদিনের ব্যবধানেই আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে এখন ১৩৯ জন।
চার দিনে ছয় মৃত্যু
শুধু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই বাড়ছে না চট্টগ্রামে। গত চারদিনের তথ্যগুলো যাচাই করতে গিয়ে জানা গেছে, এই দিনগুলোতে শনাক্ত ৫৮ রোগীর ৬ জনই এখন আর বেঁচে নেই।
রোববার (৩ মে) চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজে (বিআইটিআইডি) ১৮৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে যে ৫ জনের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছিল তাদের একজন এর আগেই মারা যান বলে সেদিন জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ।
পরদিন সোমবার (৪ মে) সকালে জ্বর-শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে নগরের এনায়েত বাজারে এক প্রবাসীর মৃত্যু হয়। পরে সেদিন রাতেই বিআইটিআইডি থেকে তার করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে।
বুধবার (৬ মে) বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এসকান্দর উল্লাহ (৫৪) নামের এক বিএনপি নেতার মৃত্যু হয়।
এদিন রাতেই বিআইটিআইডিতে ১৯০টি নমুনা পরীক্ষায় চট্টগ্রামে ১১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি গণমাধ্যমকে জানান, চট্টগ্রামে নতুন শনাক্ত ১১ জনের তিনজনই আর বেঁচে নেই।
তাদের একজন নগরের বাকলিয়া থানার রাহাত্তারপুল এলাকার বাসিন্দা, একজন নগরের চান্দগাঁও ও অপরজন চমেকে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার স্থায়ী ঠিকানা ঝালকাঠি জেলায়।
এ নিয়ে চট্টগ্রামে এক শিশু, আট পুরুষ ও দুই নারীসহ মোট ১২ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া আইসোলেশনে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ছয়জন। মৃত্যুর পর তাদের মধ্যে পাঁচজনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ পাওয়া যায়।
এ ছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন মোট ৩২ জন। তাদের মধ্যে পাঁচ পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। বর্তমানে ১৫৭ জন রোগী আইসোলেশনে আছেন। হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১৯২ জন।